পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਬਚਿ \9\9 তো দেখি নি তোমরা আমাদের উপকার করেছ। বরাবর জানি ভদ্রলোক সুদ নেয়, ভদ্রলোক ওকালতি করে, সর্বনাশ করে- জমিদার আছে, তারাও ভদ্রলোক, বরাবর রক্ত শোষণ করছে।-- গোমস্ত পাইক রয়েছে, তারা উৎপীড়ন করছে— এই তো ভদ্রলোকের পরিচয় । হঠাৎ আজ উপকার কুরতে এলে কেন।” যদি এ কথা বলে তবে খুশি হই, সে কথা বলতে হবে । আমাদের বিশ্বভারতীর একটা ব্যবস্থা আছে- তার চারি দিকে যে-সমস্ত পল্লী আছে সেগুলিকে আমরা নীরোগ করবার জন্য কিছু চেষ্টা করেছি। এটুকু তাদের বুঝিয়েছি যে, “ভদ্রলোক হয়ে জন্মেছি সে আমাদের অপরাধ নয়, তোমাদের সঙ্গে আমাদের প্রাণের মিল আছে।' সে কথা তারা বিশ্বাস করেছে, তাদের মধ্যে গিয়ে যা দেখেছি তাতে আমাদের চৈতন্য হয়েছে। আমরা যে সমস্ত বড়ো বিল্ডিং করতে চেষ্টা করছি, পলিটিক্যাল বা রাষ্ট্রনৈতিক জয়স্তম্ভ করবার চেষ্টা করছি, মাল-মাসল্লার চেষ্টা করছি- কিসের উপর । বালির উপর— প্ৰাণ নাই, জীর্ণ জরাজীর্ণ অস্থিমজ্জায় দুর্বলতা প্রবেশ করেছে ; নৈতিক নয়, বাস্তবিক, শারীরিক, কিন্তু সে মানসিক শক্তিকে নষ্ট করে । এক-আধজন এই বহুব্যাপী বিশ্বব্যাপী প্রাণহীনতাকে দূর করতে চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু বাংলা এখনো রোগ-তাপ-দুঃখে৷ ক্লিষ্ট, জয়ন্তম্ভ থাকবে না, কাত হয়ে পড়ে যাবে, একে রক্ষা করতে পারবে না, ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে হবে নইলে টিকবে না। দুর্বলতা এক রূপে না এক রূপে আপনাকে প্রকাশ করবে। দুর্বলতার একটা কৃশ্রী আকার আছে । সে হচ্ছে, আর-একজন গিয়ে সফলতা লাভ করবে, বড়ো কাজ করবে, এতে দুর্বলের মনে ঈর্ষা হয়— কী করে তাকে ছোটাে করা যায় প্রাণপণে সে চেষ্টা করে । আমি কারও দোষ দিই না । পিলে যকৃৎ ভিতরে বড়ো হলে হৃদয় বড়ো হতে পারে না । পিলে বড়ো হয়েছে, যকৃৎ বড়ো হয়েছে, অন্তরে তারা জায়গা করেছে, হৃদয়ের জায়গা ছোটো, এইজন্য বরাবর দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে সকলের চেয়ে বড়ো কমী নিজে, আর কেহ নয় । মনে শান্তি নাই, তার কারণ ভিতরকার ঈর্ষা । যে নিজে কিছু করতে পারছে না। তার ভিতরে মাৎসৰ্য ফুটে ওঠে। আমি পারছি না, অমুক পারছে, চেষ্টা করছে, তখন ‘ওর নাড়ীনক্ষত্র আমি জানি এ কথা বললে অন্তঃকরণ শান্ত হয়- সুস্থ হয় । আমাদের দেশে এমন কর্মী কেহ নাই যার সম্বন্ধে আমরা এইরকম ভাব কোনো-না-কোনো আকারে মনে পোষণ না করে থাকি, তার কীর্তি কিছু-না-কিছু খর্ব না করতে চাই। এর কারণ সেই ম্যালেরিয়ার ভিতরে- দেহের শক্তি মনের শক্তিকে নষ্ট করেছে । তা হলে আপনারা বলতে পারেন, 'আগে দেহে শক্তি সঞ্চয় করুন।’ তা নয়, মানুষকে ভাগ করা যায় না ; দেহ মন আত্মায় সে এক, আগে এইটে পরে ঐটে বলা চলে না । মনে জোর দিলে দেহে জোর পাই, দেহে জোর দিলে মনে জোর পাই, আবার দেহমানে জোর দিলে ধীশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়- দেহ মন আত্মা একসঙ্গে গাথা । যে মন্ত্রে দেহের রোগ দূর হবে সে মস্ত্ৰে মনের যে দীনতা পরনির্ভরতা তাও দূর হবে। আমার পূর্ববর্তী বক্তা বলেছেন এই-যে রেলওয়ে হয়েছে, ফলে জল-নিকাশের পথ বন্ধ হয়েছে- মস্ত মন্ত কারবারী লোক, তারা কিভাবে আমাদের দিকে তাকায়, কী দুঃখ আমরা ভোগ করছি তারা কি সেটা বোঝে | বন্যায় দেশ ভেসে যাচ্ছে তার একমাত্র কারণ, তারা লাভের উপর লাভ করে যাচ্ছে, গলা পর্যন্ত যারা লাভ করেছে তাদের পরিত্রাণের আশা নাই। তারা এই সমস্ত রেলওয়ে লাইন খুলছে। আমরা কে । আমরা "থামো থামো’ বললেই কি রেলওয়ে থামবে। না ক্ৰমাগত বুকের উপর দিয়ে চলে যাবে ? মন্ত মন্ত কারবারী তারা এই সমস্ত করছে, আমরা কেঁদে কী করব। তবে কী হবে । সমস্ত । শ্ৰীমের লোক যদি বোঝে আমরা কেউ কিছু নয়, এটা নয় ; যখন তারা বুঝবে এই কো-অপারেটিভ সোসাইটি একটা মন্ত বড়ো জিনিস- ইচ্ছা করলে সকলে মিলে মিশে মারতে পারে, তখন তারা সকলে মিলে এই দুৰ্গতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে, সকলে কণ্ঠ তুলে বলতে পারে, “ভািঙব তোমার "ওয়ে লাইন । আমরা মরব। আর তোমরা লাভ করবে ? এখন বলতে পারবে না। (আপনারা **তাল দেবেন না।) এর জন্যে অনেক ভিত্তি গাড়তে হবে, অনেকদূর গভীর করে- এটা সকলের "Pী বড়ো কাজ। আমি অনেকবার বলেছি- কবি বলে আমার কথা শোনে নাই- আমি বলেছি *াজের ভিতর থেকে সমাজের শক্তিকে জাগাতে হবে, পরস্পর সকলের সমবেত চেষ্টা-দ্বারা শক্তি