পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V&V ब्रोक्ष-धाष्नांत्री কর্মের সার্থকতা লাভ হয়। এই কাজের কথা একদিন আমি বলেছিলুম, নিজে তার কিছু সূত্রপাতও করেছিলুম। যখন বসন্তের দক্ষিণ-হাওয়া বইতে আরম্ভ করে তখন কেবলমাত্র পাখির গানই যথেষ্ট্র নয়। অরণ্যের প্রত্যেকটি গাছ তখন নিজের সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করে, তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ উৎসর্গ করে দেয়। সেই বিচিত্র প্রক্লাশেই বসন্তের উৎসব পরিপূর্ণ হয়— সেই শক্তি-অভিব্যক্তির দ্বারাই সমস্ত অরণ্য একটি আনন্দের ঐক্য লাভ করে, পূর্ণতায় ঐক্য সাধিত হয়। পাতা যখন ঝরে যায়, বৃক্ষ যখন আধমরা হয়ে পড়ে তখন প্রত্যেক গাছ আপনি দীনতায় স্বতন্ত্র থাকে, কিন্তু যখন তাদের মধ্যে প্ৰাণশক্তির সঞ্চার হয় তখন নব পুষ্প নব কিশলয়ের বিকাশে উৎসবের মধ্যে সব এক হয়ে যায়। আমাদের জাতীয় ঐক্যসাধনেরও সেই উপায়, সেই একমাত্র পন্থা। যদি আনন্দের দক্ষিণ-হাওয়া সকলের অন্তরের মধ্যে এক বাণী উদবোধিত করে তা হলেও যতক্ষণ সেই উদবোধনের বাণী আমাদের কর্মে প্রবৃত্ত না করে ততক্ষণ উৎসব পূর্ণ হতে পারে না। প্রকৃতির মধ্যে এই-যে উৎসবের কথা বললুম। তা কর্মের উৎসব । আমগাছ যে আপনার মঞ্জরী বিকশিত করে তা তার সমস্ত মজা থেকে, প্ৰাণের সমস্ত চেষ্টা দিয়ে । কর্মের এই চাঞ্চল্য বসন্তকালে পূর্ণ হয়। মাধবীলতায়ও এই কর্মশক্তির পূর্ণরূপ দেখতে পাই । বসন্তকালে সমস্ত অরণ্য এক হয়ে যায় বিচিত্র সৌন্দর্যের তানে, আনন্দের সংগীতে । তেমনি আমরা দেখতে পাই সব বড়ো বড়ো দেশে তাদের যে ঐক্য তা বাইরের ঐক্য নয়, ভাবের ঐকা নয়- বিচিত্র কর্মের মধ্যে তাদের ঐক্য । জাতির সকলকে বলদান, ধনদান, জ্ঞানদান, স্বাস্থ্যদানএই বিচিত্র কর্মচেষ্টার সমন্বয় হয়েছে যেখানে সেইখানেই যথার্থ ঐক্যের রূপ দেখতে পাওয়া যায়। শুধু কবির গানে নয়, সাহিত্যের রসে নয়- কর্মের বিচিত্র ক্ষেত্র যখন সচেষ্ট হয় তখনই সমস্ত দেশের লোক এক হয় । আমাদের দেশও সেই শুভদিনের প্রতীক্ষা করছে। বক্ততার মিথ্যা উত্তেজনায় শুধু বাক্যে শুধু মুখে 'ভাই' বললে ঐক্য স্থাপিত হয় না। ঐক্য কর্মের মধ্যে। এই কথাই আমি বলেছিলুম, যখন মনে হয়েছিল যে, সময় এসেছে । সময় এসেছিল, সে শুভ সময় চলে গিয়েছে । তখন আমার যৌবন ছিল ; সব বিরুদ্ধতার সামনে দাড়িয়েই আমি এ কথা বলেছিলুম, কেউ গ্রহণ করলে বা না-করলে তা ভুক্ষেপ না করে । আবার দিন এসেছে- দেশের লোকের চিত্তে জাগরণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, অনুকূল অবসর এসেছে- এমন সময়ে বয়সের ভগ্নাবশেষের অন্তরালে কী করে চুপ করে বসে থাকি। আবার স্মরণ করিয়ে দেবার সময় এসেছে যে, যদি মনের মধ্যে যথার্থই আনন্দ উপলব্ধি করে থাকে। তবে কেবলমাত্র বাক্যবিন্যাসের দ্বারা ভােবরসসম্ভোগে তা অপব্যয় কোরো না। যে অনুকূল সময় এসেছে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে না তোমার দ্বার থেকে, সকলে মিলে সৃষ্টির কাজে প্রবৃত্ত হও। সম্মিলিত দেশের সৃষ্টির মধ্যেই দেশের আত্মা তার গৌরবের স্থান লাভ করেন । বিশ্ববিধাতা বিশ্বকৰ্মা আপনার মহিমায় প্রতিষ্ঠিত কোথায় । তার বিশ্বসৃষ্টির মধ্যে । তেমনি দেশের আত্মার স্থানও দেশের যত সৃষ্টির কাজের মধ্যে, ভাবসম্ভোগে নয় । সেই বিচিত্র সৃষ্টির শক্তি কি জেগেছে আজ আমাদের মধ্যে- যে শক্তিতে দেশের অন্নদৈন্য, স্বাস্থ্যের দৈন্য, জ্ঞানের দৈন্য, সব ঘুচে যাবে ? বসন্তকালের অরণ্যে যেমন তরুলতা সব ঐশ্বর্ষে পূর্ণ হয়ে ওঠে, তেমনি কর্মের বিকাশে সমস্ত দেশে একটি বিচিত্র রূপ ব্যাপ্ত হয়ে যায়। সেই লক্ষণ কি দেখতে পাই আমরা । আমি তো সায় পাই নে অন্তরে। ভাবাবেগ আছে, কিন্তু তার মধ্যে কর্মের প্রবর্তন অতি অল্প। কিছু কাজ যে হয় নি তা বলছি নে, কিন্তু সে বড়ো অল্প । আবার সেজনে পুরোনো কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সময় এসেছে। কিন্তু আমার সময় গিয়েছে, স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়েছে, আর অধিক দিন বাকি নেই। আমার । তথাপি আমি বেরিয়েছি- পুরস্কারের জন্যে নয়, বরমাল্য নেবার Yজন্যে নয়, করতালিলাভের জন্যে নয়, সম্মানের ট্যাক্স আদায় করবার জন্যে নয়- দেশকে আপনার জানতে চাচ্ছেন্ন কর্ম-দ্বারা, এইটুকু দেখে যাব আমি । জীবনের অবসানকালে আমি দেখে যেতে চাই যে, সর্বত্র কর্মশক্তি উদ্যত হয়েছে। তা যদি না দেখতে পাই তবে জানিব যে, আমাদের যে ভাবাবেগ তা সত্য নয়। যেখানে চিত্তের সত্য-উদবোধন হয় সেখানে সত্যকর্ম। আপনি প্ৰকাশ পায় । দেশের মধ্যে কর্ম না দেখে আমাদের চিত্ত বিষয় হয়েছে। মরুভূমির মধ্যে আমরা কী দেখতে পাই । খর্বাকৃতি