পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8O8 রবীন্দ্র-রচনাবলী রইল না। এখন আমাকে এই বিরাট এই বৃহৎ কর্মক্ষেত্রের ভার বহন করতে হচ্ছে। কোনো উপায় নেই। আর তাকে অস্বীকার করবার। -- আজ। আপনারা সাহিত্যিকরা এখানে এসেছেন ; আপনাদের সহজে ছাড়ছি নে- আপনাদের দেখে যেতে হবে আমাদের এই অনুষ্ঠান। দেখে যেতে হবে দেশের উপেক্ষিত এই গ্রাম, বাপ-মায়ের তাড়ানাে সন্তানের মতো এই গ্রামবাসীদের, এই উপেক্ষিত হতভাগােরা কেমন করে ছিন্ন বস্ত্র নিয়ে অর্ধশিনে দিন কাটায় । আপনাদের নিজের চোখে দেখতে হবে, কত বড়ো কর্তব্যের গুরুভার আমাদের ও আপনাদের উপর রয়েছে। এদের দাবি পূর্ণ করবার শক্তি নেই- আমাদের এর চেয়ে লজ্জা ও অপমানের কথা আর কী আছে! কোথায় আমাদের দেশের প্রাণ, সত্যিকার অভাব অভিযোগ কোথায়, তা আপনাদের দেখে যেতে হবে। আবার সত্যিকার কাজ কোথায় তাও আপনারা দেখে যান। আমি আমার জীবনে অনেক নিন্দা সয়েছি, অনেক নিন্দা এখনো আমার ভাগ্যে আছে। আমি ধনীসন্তান, দরিদ্রের অভাব জানি না, বুঝতে পারি না- এ অভিযোগ যে কত বড়ো মিথ্যা তা আপনারা আজ উপলব্ধি করুন । দরিদ্র-নারায়ণের সেবা তারাই করেন যারা খবরের কাগজে নাম প্রকাশ করেন । আমি গদ্যে পদ্যে ছন্দে অনেক-কিছু লিখেছি, তার কোনোটার মিল আছে, কোনোটার মিল নেই। সে-সব বেঁচে থাক বা না থাক, তার বিচার ভবিষ্যতের হাতে । কিন্তু আমি ধনীর সন্তান, দরিদ্রের অভাব জানি নে, বুঝি নে, পল্লী-উন্নয়নের কোনো সন্ধানই জানি নে, এমন কথা আমি মেনে নিতে রাজি নই। আমি ধনী নই, আমার যা সাধ্য ছিল, আমার যে সম্পত্তি ছিল, যে সামান্য সম্বল ছিল, আমি এই অপমানিতের জন্য তা দিয়েছি। আমি অভাজন, বক্তৃতা দিয়ে রাষ্ট্রমঞ্চে দাড়িয়ে গর্ব প্রকাশ করবার মতো আমার কিছুই নেই। একদিন সেই নদীপথে যেতে যেতে অসহায় গ্রামবাসীদের যে চেহারা দেখেছি তা আমি ভুলতে পারি নি, তাই আজ এখানে এই মহাব্ৰতের অনুষ্ঠান করেছি। তার পর এ কাজ একার নয়। এই কর্ম বহু লোককে নিয়ে । বহু লোককে নিয়ে একে গড়ে তুলতে হয় । সাহিত্য-রচনা একলার জিনিস, সমালোচনা তার দূর হতেও চলে। কিন্তু এই-যে ব্ৰত, এই-যে কর্মের অনুষ্ঠান, যা আমি গড়ে তুলছি, যে কাজের ভার আমি গ্রহণ করেছি- তার সমালোচনা দূর হতে চলে না । একে দরদ দিয়ে দেখতে হয়, অনুভব করতে হয়। আজ। আপনারা কবি রবীন্দ্রনাথকে নয়, তার কর্মের অনুষ্ঠানকে প্রত্যক্ষ করুন, দেখে লিখুন, সকলকে জানিয়ে দিন কত বড়ো দুঃসাধ্য কাজের ভিতর আমাকে জড়িয়ে ফেলতে হয়েছে। আমি পল্পীপ্ৰকৃতি সৌন্দর্যের যে চিত্র এঁকেছি তা শুধু পল্পীপ্ৰকৃতির বাহিরের সৌন্দর্য ; তার ভিতরকার সত্যরূপ যে কী শোচনীয়, কী দুর্দশাগ্রান্ত তা আজ। আপনার প্রত্যক্ষ করুন। আমাকে এখানে আপনারা বিচার করবেন কবিরূপে নয়, কর্মীরূপে ; এবং সে কর্মের পরিচয় আপনারা এখনই (FV 93 || এই-যে কর্মের ধারা আমি এখানে প্রবর্তন করেছি, এই কার্যের, এই প্ৰতিষ্ঠানের ভার দেশের লোকের কি গ্ৰহণ করা উচিত নয় - আজ। আপনাদের আমি আমার এই কর্মক্ষেত্রে নিমন্ত্রণ করে এনেছি, কবিতা শোনাবার জন্যে বা কাব্য-আলোচনার জন্যে নয়। আজ। আপনারা দেখে যান এবং বুঝে যান বাংলার প্রকৃত কর্মক্ষেত্র কোথায় । তাই এখানে আজ বার বার একই কথা বলেছি । আসেল আমার ঐকািনক গুৰুতভাবে উপৰি কতে পারেন—তাই হবে তার গ্রন্থ সার্থকতা । ७० गङ्गून »०8७ by 080