পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ডের ভূমিকা এই খণ্ডগুলিতে রবীন্দ্রনাথের বর্জিত রচনাগুলি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইতেছে। ইহার নাম দেওয়া হইয়াছে। ‘আচলিত সংগ্ৰহ । ইহার দুই ভাগ ; পুস্তক বা পুস্তিকা আকারে যেগুলি মুদ্রিত হইয়াছিল এবং লেখকের ইচ্ছায় পরবর্তীকালে আর মুদ্রিত হয় নাই। পুস্তিকাকারে প্রকাশিত কয়েকটি রচনা অনবধানবশতই কোনো পুস্তকসংগ্রহে স্থান পায় নাই, এই অংশে তেমন রচনাও থাকিবে । দুই-একটি পুস্তক পরবর্তী কালে সম্পূর্ণ পুনর্লিখিত বা পরিবর্জিত-পরিবর্ধিত হইয়া প্রকাশিত হইয়াছে, সেগুলিরও মূল সংস্করণ এই অংশে স্থান পাইতেছে । দ্বিতীয় ভাগে সেই সকল রচনা থাকিবে যাহা সাময়িক পত্রিকার পৃষ্ঠাতেই রহিয়া গিয়াছে, পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইবার গৌরব লাভ করে নাই। ইহার অধিকাংশই লেখক স্বয়ং বর্জন করিয়াছেন, তবে কয়েকটি এমন রচনাও আছে যাহা নিতান্ত ভুলক্রমে বাদ পডিয়াছে। রচনাবলীতে এই উভয় শ্রেণীর বর্জিত রচনা সংকলন করার বিপক্ষে রবীন্দ্রনাথ অনেকবার অনেক যুক্তি দিয়াছেন, সকল যুক্তি মানিয়া লইয়াও যে আমরা তাহার ইচ্ছার বিরোধিতা করিতেছি তাহার একমাত্র কারণ- এই রচনাবলীকে সমগ্র রচনাবলী করার ঐকান্তিক ইচ্ছ। অপরিপুষ্ট ও অবাঞ্ছিত রচনার প্রকাশে আর যাহারই ক্ষতি হউক, রবীন্দ্রনাথের ক্ষতি হইবার আশঙ্কা নাই। তা ছাড়া, বহু পাঠককে আমরা আক্ষেপ করিতে দেখিয়াছি, রবীন্দ্রনাথের বাল্যরচনা তাহার চেষ্টা করিয়াও সংগ্ৰহ করিতে পারেন। নাই ; এগুলি এখন অতিশয় দুস্তপ্রাপ্য। তঁহাদের আক্ষেপ-মোচনও এই পরিশিষ্ট খণ্ডগুলি প্রকাশের অন্যতম কারণ । রবীন্দ্রনাথ প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় লিখিয়াছেন‘অতি অল্প বয়স থেকে স্বভাবতই আমার লেখার ধারা আমার জীবনের ধারার সঙ্গে সঙ্গেই অবিচ্ছিন্ন এগিয়ে চলেছে। চারি দিকের অবস্থা ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে এবং অভিজ্ঞতার নূতন আমদানি ও বৈচিত্র্যে রচনার পরিণতি নানা বাক নিয়েছে ও রূপ নিয়েছে ; একটা কোনো ঐক্যের স্বাক্ষর তাদের সকলের মধ্যে অঙ্কিত হয়ে নিশ্চয়ই পরস্পরের আত্মীয়তার প্রমাণ দিতে থাকে । যারা বাইরে থেকে সন্ধান ও চর্চা করেন তাদের বিচারবুদ্ধির কাছে সেটা ধরা পড়ে। কিন্তু লেখকের কাছে সেটা স্পষ্ট গোচর হয় না । মনের ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে যখন ফুল ফোটায় ফল ফলায় তখন সেইটের আবেগ ও বাস্তবতাই কবির কাছে হয় একান্ত প্ৰত্যক্ষ । তার মাঝে মাঝে সময় আসে যখন ফলন যায় কমে, যখন হাওয়ার মধ্যে প্রাণশক্তির প্রেরণা হয় ক্ষীণ । তখন ইতস্তত যে ফসলের চিহ্ন দেখা দেয় সে আগেকার কাটা শস্যের পােড়ো বীজের অন্ধুর। এই অফলা সময়গুলো ভোলবার যোগ্য। এটা হল উদ্ধৃবৃত্তির ক্ষেত্র তাদেরই কাছে যারা ঐতিহাসিক *ঐহকর্তা । কিন্তু ইতিহাসের সম্বল আর কাব্যের সম্পত্তি এক জাতের নয়। ইতিহাস সবই মনে রাখতে চায় কিন্তু সাহিত্য অনেক ভোলে। ছাপাখানা ঐতিহাসিকের সহায়। সাহিত্যের মধ্যে আছে বাছাই করার ধর্ম ছাপাখানা তার প্রবল স্বাধী। কবির রচনাক্ষেত্ৰকে তুলনা করা যেতে পারে নীহারিকার সঙ্গে। তার বিস্তীর্ণ