পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবি-কাহিনী দাড়াইল এক জন বনের বালিকা, চাহিয়া মুখের পানে কহিল করুণ স্বরে, “কে তুমি গো পথশ্রান্ত বিষয়ে পথিক ? অধরে বিবাদ যেন পেতেছে আসন তার নয়ন কহিছে যেন শোকের কাহিনী । তরুণ হৃদয় কোন অমন বিষাদময় ? কি দুখে উদাস হয়ে করিছ ভ্ৰমণ ?” “প্ৰাণের শূন্যতা কেন ঘুচিল না বালা ?” একে একে কত কথা কহিল বালিকা কাছে, যত কথা রুদ্ধ ছিল হৃদয়ে কবিরআগ্নেয় গিরির বুকে জ্বলন্ত অগ্নির মতো যত কথা ছিল কবি কহিলা গভীরে । “নদ নদী গিরি গুহা কত দেখিলাম, তবু প্ৰাণের শূন্যতা কেন ঘুচিল না দেবি ।” বালার কপোল বাহি নীরবে অশ্রুর বিন্দু কবির হৃদয় গিয়া প্ৰবেশিল যেন ; দেখি সে করুণাবারি নিরাশ্রশ্ন কবির চোখে কত দিন পরে হল অশ্রনীর উদয় । শ্ৰান্ত হৃদয়ের তরে যে আশ্রয় খুঁজে খুঁজে পাগল ভ্ৰমিতেছিল হেথায় হোথায়আজ যেন একটুকু আশ্রয় পাইল হৃদি, আজ যেন একটুকু জুড়ালো যন্ত্ৰণা । যে হৃদয় নিরাশায় মরুভূমি হয়েছিল সেথা হতে হল। আজ অশ্রু উৎসারিত । শান্ত সে কবির মাথা রাখিয়া কোলের পরে, সরলা মুছায়ে দিল অশ্রাবারিধারা । কবি সে ভাবিলে মনে, তুমি কোথাকার দেবী কি অমৃত ঢালিলে গো প্ৰাণের ভিতর ! লালনা তখন ধীরে চাহিয়া কবির মুখে কহিল মমতাময় করুণ কথায়,- “হোথায় বিজন বনে দেখেছি কুটার ওই, চল পাচ্ছি। ওইখানে যাই দুজনায় । বন হতে ফল মূল আপনি তুলিয়া দিব, নিকাির হইতে তুলি আনিব সলিল, যতনে পর্ণের শয্যা দিব আমি বিছাইয়া, সুখনিদ্রা-কোলে সেন্থা লভিবে বিরাম, আমার বীণাটি লয়ে গান শুনাইবা কত, কত কি কথায় দিন যাইবে কাটিয়া । 8VSO NA