পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবি-কাহিনী কুটীরে কেহই নাই, শূন্য তা রয়েছে পড়িবেষ্টিত বিতন্ত্রী বীণা লুতাতন্তুজালে । ডাকিয়া সমুচ্চ স্বরে, নলিনী ! নলিনী... ! মিলিয়া কবির সাথে বনদেবী উচ্চস্বরে ডাকিল কাতরে আহা, নলিনী ! নলিনী ! কেহই দিল না। সাড়া, শুধু সে শবদ শুনি সুপ্ত হরিণেরা ত্ৰস্ত উঠিল জাগিয়া । অবশের্ষে গিরিশাঙ্গে উঠিল কাতর কবি, নলিনীর সাথে যেথা থাকিত বসিয়া । দেখিল সে গিরি-শৃঙ্গে, শীতল তুষার-’পরে, নলিনী ঘুমায়ে আছে মানমুখচ্ছবি । কঠোর তুষারে তার শুএলায়ে পড়েছে কেশ, খসিয়া পড়েছে পাশে শিথিল উমাচল । বিশাল নয়ন তার অর্ধনিমীলিত, হাত দুটি ঢাকা আছে। অনাবৃত বুকে । একটি হরিণশিশু খেলা করিবার তরে কন্তু বা অঞ্চল ধরি টানিতেছে তার, কন্তু বা অবাক নেত্ৰে রয়েছে চাহিয়া ! তবু নলিনীর ঘুম কিছুতেই ভাঙিছে না, নীরবে নিম্পন্দ হয়ে রয়েছে ভূতলে । দূর হতে কবি তারে দেখিয়া কহিল উচ্চে, “নলিনি, এয়েছি আমি দেখসে বালিকা ।” তবুও নলিনী বালা না দিয়া উত্তর শীতল তুষার-’পরে রহিল ঘুমায়ে । কবি সে শিখর-’পরে করি আরোহণ শীতল অধর তার করিল চুম্বনশিহরিয়া চমকিয়া দেখিল সে কবি না নড়ে হৃদয় তার, না পড়ে নিশ্বাস । দেখিল না, ভাবিল না, কহিল না কিছু, যেমন চাহিয়া ছিল রহিল চাহিয়া । নিদারুণ কী যেন কী দেখিয়া তরাসে নয়ন হইয়া গেল আচল পাষাণ । কতক্ষণে কবি। তবে পাইল চেতন, দেখিল তুষার শুভ্ৰ নলিনীর দেহ হৃদয়জীবনহীন জড় দেহ তার অনুপম সৌন্দর্যের কুসুম-আলয়, হৃদয়ের মরমের আদরের ধনতৃণ কাষ্ঠ সম ভুমে যায় গড়াগড়ি ! বুকে তারে তুলে লয়ে ডাকিল “নলিনী”, 88 vo