পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবি-কাহিনী হারাইয়া দিঘিদিক, হারাইয়া পথ, সািভয়ে বিস্ময়ে, হয়ে হতজ্ঞানপ্ৰায় তোমার চরণতলে রয়েছি পড়িয়া । উর্ধবমুখে চেয়ে দেখি ভেদিয়া আঁধার শূন্যে শূন্যে শত শত উজ্জ্বল তারকা, অনিমিষ নেত্রগুলি মেলিয়া যেন রে আমারি মুখের পানে রয়েছে চাহিয়া । ওগো হিমালয়, তুমি কী গভীর ভাবে উদাড়ায়ে রয়েছ হেথা আচল অটল, দেখিছ কালের লীলা, করিছ। গণনা, কালচক্ৰ কত বার আইল ফিরিয়া ! সিন্ধুর বেলার বক্ষে গড়ায় যেমন অযুত তরঙ্গ, কিছু লক্ষ্য না করিয়া কত কাল আইল রে, গোল কত কাল হিমাদ্রি তোমার ওই চক্ষের উপরি । মাথার উপর দিয়া কত দিবাকর উলটি কালের পৃষ্ঠা গিয়াছে চলিয়া । গভীর তীমাধারে ঢাকি তোমার ও দেহ কত রাত্ৰি আসিয়াছে গিয়াছে পোহায়ে । কিন্তু বলো দেখি ওগো হিমালয়গিরি কী দেখিছ এইখানে দাড়ায়ে দাড়ায়ে ? যা দেখিছ যা দেখেছি তাতে কি এখনো সৰ্ব্বাঙ্গ তোমার গিরি উঠে নি শিহরি ? কী দারুণ অশান্তি এ মনুষ্যজগতেরক্তপাত, অত্যাচার, পাপ কোলাহল দিতেছে, মানবমনে বিষ মিশাইয়া ! অধীনতা শঙ্খলেতে আবদ্ধ হইয়া ভরিছে স্বগের কৰ্ণ কাতর ক্ৰন্দনে, অবশেষে মন এত হয়েছে নিস্তেজ, কলঙ্কশঙ্খল তার অলংকাররূপে আলিঙ্গন করে তারে রেখেছে। গলায় ! দাসত্বের পদধূলি অহংকার করে মাথায় বহন করে পরপ্ৰত্যাশীরা ! যে পদ মাথায় করে ঘূণার আঘাত সেই পদ ভক্তিভারে করে গো চুম্বন ! যে হস্ত ভ্ৰাতারে তার পরায় শূঙ্খল, সেই হস্ত পরিশিলে স্বৰ্গ পায় করে । স্বাধীন, সে অধীনেরে দলিবার তরে, অধীন, সে স্বাধীনেরে পূজিবারে শুধু ! 88 a