পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভগ্নহৃদয় তাই এই মহারণ্যে আমারাত্রে আসি গো একাকী, মহান ভাবের ভারে দুরন্ত এ ভাবনারে কিছুক্ষণ-তরে তবু দমন করিয়া যেন রাখি । চন্দ্ৰশূন্য আঁধারের নিস্তরঙ্গ সমুদ্রমাঝারে সমস্ত জগৎ যাবে মগ্ন হয়ে গেছে। একেবারে অসহায় ধরা এক মহামস্ত্রে হয়ে অচেতন নিশীথের পদতলে করিয়াছে আত্মসমৰ্পণ, তখন অধীর হৃদি অভিভূত হয়ে যেন পড়েঅতি ধীরে বহে শ্বাস, নয়নেতে পালক না নড়ে । প্ৰাণের সমুদ্র এক আছে যেন এ দেহমাঝিারে, মহা উচ্ছাসের সিন্ধু রুদ্ধ এই ক্ষুদ্র কারাগারে ! মনের এ রুদ্ধস্রোত দেহখানা করি বিদারিত সমস্ত জগৎ যেন চাহে, সখি, করিতে প্লাবিত ! অনন্ত আকাশ যদি হ’ত এ মনের ক্রীড়াস্থল, অগণ্য তারকারাশি হ’ত তার খেলেনা কেবল, চৌদিকে দিগন্ত আসি রুধিত না অনন্ত আকাশ, দুরন্ত এ মন-শিশু প্ৰকৃতির স্তন্য পান করি আনন্দসংগীতস্রোতে ফেলিত গো শূন্যতল ভরি, উষার কনকস্রোতে প্ৰতিদিন করিত সে স্নান, জোছনা-মদিরাধারা পূর্ণিমায় করিত সে পান, ঘূর্ণ্যমান ঝটিকার মেঘমাঝে বসিযা একেলা কৌতুকে দেখিত যত বিদ্যুৎ-বালিকাদের খেলা, দুরন্ত ঝটিকা হােথা এলোচুলে বেড়াত নাচিয়া তরঙ্গের শিরে শিরে অধীর চরণ বিক্ষেপিয়া । হরষে বসিত গিয়া ধূমকেতুপাখ্যার উপরে, তপনের চারি দিকে ভ্ৰমিত সে বর্ষ বর্ষ ধরে । প্ৰকৃতি দেখাত তারে যেথা তার যত ধন আছে ; কুসুমের রেণুমাখা বসন্তের পাখায় চড়িয়া সমীরণ কুসুমের লঘু পরিমলভার বহি পথশ্রমে শ্রান্ত হয়ে বিশ্রাম লভিছে রহি রহি, সেই পরিমল সাথে আমনি সে যাইত মিলায়েভ্ৰমি কত বনে বনে পরিমালরাশি-সনে অতি দূর দিগন্তের হৃদয়েতে যাইত মিশায়ে । শত শত বিহগের হৃদয়ের আনন্দ-উচ্ছাস 6* R 9