পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ললিতা । অনিল । ভগ্নহৃদয় ললিতার প্রবেশ কেন গো বিষয় হেরি নাথের বন্দন ? না জেনে কি দোষ কিছু করেছি। এমন ? একবার কাছে গিয়ে ধরি দুটি হাত শুধাব কি- “হয়েছে কী ? অবোধ ললিতা সে কি না বুঝে হৃদয়ে তব দিয়েছে আঘাত ?” সেদিন তো শুধালেন নাথ যাবে আসি “একবার বল তো রে ভালো কি বাসিস মোরে ?” মুক্তকণ্ঠে বলেছিনু “নাথ, ভালোবাসি !” একেবারে সব লজ দিনু বিসর্জন, বুকে তার মুখ রেখে করেছি। রোদনকঁদিয়ে কহোঁছি কথা, জানায়েছি। সব ব্যথা যত কথা রুদ্ধ ছিল মরমতলেতে, এত দিন বলি বলি পারি নি বলিতে ! সেদিন তো কোনো লজা ছিল নাকে আর, কিন্তু গো আবার কেন উদিল আবার ! হেথায় দাড়ায়ে আমি রহি এক ধারে- ; এখনি দেখিতে নাথ পাবেন আমারে ! ডাকিলেই কাছে গিয়ে সব লজা বিসৰ্জিয়ে একেবারে পায়ে ধরে কেঁদে গিয়ে কবি, “বলো, নাথ, কী করেছি ? কী হয়েছে তব ?” এমন বিষন্ন হয়ে বসে আছি হেথা তবুও সে দূরে আছে— তবু সে এল না। কাছে, তবুও সে শুধালে না একটিও কথা ! পাষাণ বজেতে গড়া এ লজ্জা তাহার প্ৰেমবরিষার নদী ভাঙিতে নারিল যদি, দয়াতেও ভাঙিবে না। হেরি অশ্রদ্ধার ? লজ্জার একাধিপত্য যে নিষ্ঠুর মনে, প্ৰেম দয়া যে হািদয়ে বাস করে ভয়ে ভয়ে, চরণে শৃঙ্খল বাধা লজ্জার শাসনে— অনিল, কি করিবি রে লয়ে হেন মন ? তুই চাস মুখে তোর হেরিলে বিষাদ ঘোর অশ্রািজলে অশ্রািজল করিবে বর্ষণ ! কত না আদরে তোরি মুছাবে নয়ন ! তুই কি চাস রে হেন পাষাণমুরতি দূরে দাড়াইয়ারবে- একটি কথা না কবে, সাত্মনাের তরে যবে তুই ব্যগ্ৰ অতি ? হায় রে অদৃষ্ট মোর, কিছুই হল না— সেই-সব, সেই-সব- সেই হাহাকাররব সেই অশ্রাবারিধারা হৃদয়বেদনা ! . [আনিলের বেগে প্ৰস্থান GS