পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ტხr 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দয়াছেন । তাহার একটিকেও আমরা ভাঙিতে পারি না, স্থানান্তর করিতে পারি না । যদি তাহা করিতে চেষ্টা করি, তৎক্ষণাৎ তাহার শান্তি ভোগ করিতে হয় । যদি কখনো ভ্ৰমন্ত্ৰুমে আমরা মনে করি “আমার শরীর আমার ও সেই মনে করিয়া তাহার প্রতি যথেচ্ছাচার করি, তৎক্ষণাৎ রোগ আসিয়া তাহার শাস্তি দেয়। এই জন্যই আমার শরীরকে পরের শরীরের মতো অতি সন্তপণে রাখিতে হয়, যেন কে তাহা আমার জিন্মায় রাখিয়াছে ; সর্বদা সশঙ্কিত, পাছে তাহাতে আঘাত লাগে, পাছে তাহাতে আঁচড় পড়ে, পাছে তাহা মলিন হয় । মনকে যদি তুমি মনে করা ‘আমার ও তাহার প্রতি যথেচ্ছা ব্যবহার কর, তবে চিরজীবন মনের যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়। এই জন্য আমরা মনকে অতি সাবধানে রাখি, একটি কঠোর হস্ত তাহাকে ছুইবামাত্র আমরা সশঙ্কিত হইয়া উঠি। মন যদি আমার নয়, শরীর যদি আমার নয় তো কে আমার ? অধিকার জনক রাজা কহিলেন, “এক্ষণে আমার মোহ নির্মুক্ত হওয়াতে আমি নিশ্চয় বুঝিতে পারিয়াছি যে, কোনো পদার্থেই আমার অধিকার নাই, অথবা আমি সমুদয় পদার্থেরই অধিকারী। আমার আত্মাও আমার নাহে ; অথবা সমুদয় পৃথিবীই আমার । ফলত ইহলোকে সকল বস্তুতেই সকলের সমান অধিকার বিদ্যমান রহিয়াছে।”— —মহাভারত। আশ্বমেধিক পর্ব। অনুগীতা পর্বাধ্যায়। দ্বাত্রিংশত্তম অধ্যায়। পৃ. ৪৩ জনক রাজার উপরি-উক্ত উক্তি লইয়া একটা তর্ক উপস্থিত হইল, নিম্নে তাহা প্ৰকাশ করিলাম । আমি । যাহা কিছু আমি দেখিতে পাই, সকলই আমার। তুমি । সে কিরকম কথা ? আমি। নহে তো কি? যে গুণে তুমি একটা পদার্থকে আমার বলো, সে গুণটি কি ? তুমি। অন্য সকলে যে পদার্থকে উপভোগ করিতে পায় না, অথবা আংশিক ভাবে পায়, আমিই কেবল যাহাকে সর্বতোভাবে উপভোগ করিতে পাই, তাহাই আমার । আমি। পৃথিবীতে এমন কি পদার্থ আছে, যাহাকে আমরা সর্বতোভাবে উপভোগ করিতে পারি ? কোনটার ব্ৰাণ, কোনটার শব্দ, কোনটার স্বাদ, কোনটার দৃশ্য, কোনটার স্পর্শ আমরা ভোগ করি, অথবা একাধারে ইহাদের দুই-তিনটাও ভোগ করিতে পারি। কিংবা হয়ত ইহাদের সকলগুলিকেই এক পদার্থের মধ্যে পাইলাম, কিন্তু তবু তাহাকে সর্বতোভাবে উপভোগ করিতে পারি কই ? জগতে আমরা ; কিছুই সর্বতোভাবে জানি না, একটি তৃণকেও না- তবে সর্বতোভাবে ভোগ করিব কি করিয়া ? কে বলিতে পারে আমাদের যদি আর একটি ইন্দ্ৰিয় থাকিত তবে এই তৃণটির মধ্যে দৃষ্টি স্বাদ গন্ধ স্পর্শ প্রভৃতি ব্যতীতও আরো অনেক উপভোগ্য গুণ দেখিতে না পাইতাম ? তুমি । তুমি অত সূক্ষ্মে গেলে চলিবে কেন ? “সর্বতোভাবে উপভোগ করা"র অর্থ এই যে, মানুষের পক্ষে যত দূর সম্ভব তত দূর উপভোগ করা। আমি । এই স্থলে তুমি উপভোগ শব্দ ব্যবহার করিয়া অতিশয় ভ্ৰমাত্মক কথা কহিতেছ। প্রচলিত ভাষায় স্বত্ব থাকা, উপভোগ করা, উভয়ের এক অর্থনহে। মনে কর এক জন হতভাগ্য নিজে ভাঙা ঘরে কুশ্ৰী পদার্থের মধ্যে বাস করে ও গীেরাঙ্গ প্ৰভুদের জন্য একটি অট্টালিকা ভালো ভালো ছবি, রভীন কাপেট ও ঝাড়-লণ্ঠন দিয়া সুসজ্জিত করিয়া রাখিয়ছে- সে অট্টালিকা, সে ছবি, সে উপভোগ করে না বলিয়াই কি তাহা তাহার নাহে ?