পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se °》 “আর তার পরে চণ্ডীদাস বলেছেন, ‘কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিয়া দিল। அr ” তোমার ঐ ঠাট্টাতেই তুমি জিতে যাও, কোনটা যে তোমার আসল কথা ধরা যায় না।” “তা বুঝবার বুদ্ধিই যদি থাকত। তবে এই পুলিস ইনসাপেক্টরি কাজ তুমি করতে না । এর চেয়ে বড়ো কাজেই সরকার বাহাদুর তোমাকে লাগিয়ে দিতেন বিশ্বহিতৈষীর পদে, বক্তৃতা দিতে দিতে দেশে-বিদেশে জাল ফেলতে ।” “সর্বনাশ, তা হলে সেই যে মেয়েটির গুজব শোনা যাচ্ছে, সে দেখি আমার আপনি ঘরেরই ভিতরকার ।” “ঐ দেখো, কুকুরটা চেচিয়ে মরছে। তাকে খাইয়ে ঠাণ্ডা করে আসি ৷” ইনসপেক্টারবাবু মহা খাপ্পা হয়ে বললেন, “আমি এক্ষুনি গিয়ে লাগবে ঐ কুকুরটাকে আমার পিস্তলের গুলি ।” সন্দু তার স্বামীর কাপড় ধরে টেনে বললে, “না, কখখনো তুমি যেতে পারবে না।” “কোন ৷” “তুমি সামনে গিয়ে দাড়ালেই একেবারে টুটি কঁ্যাক করে চেপে ধরবে । ও বড়ো বদমাইস কুকুর। ও কেবল আমাকেই চেনে ৷” “একটা খবর পেয়েছি। সন্দু, সেই অনিল লোকটা হরবোলা, ও সব জন্তুরই নকল করতে পারে। রোজ রাত্রি দুটাের সময়ে ঐ-যে তোমায় ডাক দিচ্ছে না। তাই বা বলি কী করে ।” সন্দু একেবারে জ্বলে উঠে বললে, “আঁ্যা, শেষকালে আমাকে সন্দেহ ! এই রইল তোমার ঘরকন্না পড়ে, আমি চললুম আমার ভগ্নীপতির বাড়িতে ।” এই বলে সে উঠে পড়ল । “আরে, কোথায় যাও ! ভালো মুশকিল ! নিজের ঘরের স্ত্রীকে ঠাট্টা করব না, আমি ঠাট্টার জন্যে পরের ঘরের মেয়ে কোথায় খুঁজে পাই । পেলেই বা শান্তি রক্ষা হবে কী করে ।” বলে ওকে জোর করে ধরে বসালেন । সন্দু কেবলই চোখ মুছতে লাগল । “আহা, কী করছ, কাদ কেন, সামান্য একটা ঠাট্টা নিয়ে ?” “না, তোমার এই ঠাট্টা আমার সইবে না, আমি বলে রাখছি।” ”আচ্ছা, আচ্ছা, ব্যস— রইল, এখন তুমি আরামে নিশ্চিন্ত হয়ে তোমার কুকুরকে খাইয়ে এসো। ও আবার কাটলেট নইলে খায় না, পুডিং না হলে পেট ওর ভরে না। সামান্য কুকুর নিয়ে তুমি অত বাড়াবাড়ি কর কেন আমি বুঝতেই পারি না ।” সদু বললে, “তোমরা পুরুষমানুষ বুঝবে না । পুত্ৰহীন মেয়ের বুকে যে স্নেহ জমে থাকে সে যে-কোনো একটা প্ৰাণীকে পেলে তাকে বুকের কাছে টেনে নেয়। ওকে একদিন না দেখলে আমার মনে কেবলই, ভয় হতে থাকে, কে ওকে কোন দিক থেকে ধরে নিয়ে গেল। তাই তো আমি ওকে এত যত্নে ঢেকেঢুকে রাখি । । “কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি সন্দু, কোনাে জানােয়ার এত আদরে বেশি দিন বাঁচতে পারে না।” "তা, যতদিন বঁাচে ভালো করেই বীচুক ।” বিজয়বাবু বিশ্রাম করতে লাগলেন । ইতিমধ্যে পুলিসের দলবল জুটল, চলল সবাই আলাদা আলাদা রাস্তায় মোচকাঠির দিকে । বহু দূরের পথ, প্রায় রাত পুইয়ে গেল যেতে-আসতে। পরের দিন বেলা সাতটার সময় মুখ শুকিয়ে ইনসাপেক্টর বাড়িতে এসে কেদারাটার উপরে ধপাস করে বসে পড়লেন। বললেন, “সদু, বড়ো ফাকি দিয়েছে! তোমার কথাই সত্যি । পুলিসের লোক ফোরাও করলে বন, সে বনে জনমানব নেই। হৈ হৈ লাগিয়ে দিলে চীৎকার করে বলতে লাগলে,