পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दिक्षि श्मश्र Ved G2 মনোগণিত পাটিগণিত, রেখাগণিত ও বীজগণিতের নিয়মসকল পণ্ডিতগণ বাহির করিলেন ; কিন্তু এখনো মনোগণিতে কেহ হস্তক্ষেপ করেন নাই। প্রতিভাসম্পন্ন পাঠকদিগকে বলিয়া রাখিতেছি, একটা আবিষ্কারের পথ এই “উনবিংশ শতাব্দীতেও” গুপ্ত রহিয়াছে। অনেক অশিক্ষিত লোকে যেমন বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালী ও নিয়ম না জানিয়াও কেবল বুদ্ধি অভ্যাস ও শুভঙ্করের নিয়মে অঙ্ক কষিতে পারে, তেমনি কবিগণ এত কাল ধরিয়া মনোগণিতের অঙ্ক কষিয়া আসিতেছেন। শকুন্তলা কষিতেছেন, হ্যামলেট কষিতেছেন এবং মহাভারত রামায়ণে অঙ্কের স্তুপ কষিতেছেন। এইরূপ করিয়াই, বোধ করি, ক্রমে মনোগণিতের নিয়মসকল বাহির হইবে। ইহা যে নিতান্ত দুরূহ তাহা বলা বাহুল্য ; ফরাসী জাতি, ইংরাজ জাতি, জার্মান জাতি এই মনোগণিতের এক একটা অঙ্কফল । ঐতিহাসিকগণ, কী কী অঙ্কের যোগে বিয়োগে এই সকল অঙ্কফল হইয়াছে তাহাই কষিয়া দেখিতে চেষ্টা করেন । কাহারও ভুল হয়, কাহারও ঠিক হয়, কিন্তু এত বড়ো অঙ্কবিৎ কেহ নাই যে, ঠিক মীমাংসা করিয়া দিতে পারে । আমাদের মধ্যে অদৃশ্য অলক্ষিতভাবে ভিতরে ভিতরে কী কম অঙ্ক-কষাকষি চলিতেছে! তোমাতে আমাতে মিলন হইল । তোমার খানিকটা আমাতে আসিল, আমার খানিকটা তোমাতে গেল, আমার একটা গুণ হয়ত হারাইলাম, তোমার একটা গুণ হয়ত পাইলাম ও তাহা আমার আর একটা গুণের সহিত মিশ্রিত হইয়া অপূর্ব আকার ধারণ করিল। এইরূপে মানুষে মানুষে ও তাঁহাই শৃঙ্খলবদ্ধ হইয়া সমস্ত জাতিতে ও অবশেষে জাতিতে জাতিতে যোগ গুণ ভাগ বিয়োগ হইয়া মনুষ্যজাতি-নামক একটা অতি প্ৰকাণ্ড অঙ্ক কষা হইতেছে । বিপ্লব (Revolution)-নাম কবিতায় Matthew Arnold বলেন যে “মানুষ যখন মর্ত্যলোকে আসিবার উদ্যোগ করিল। তখন ঈশ্বর তাহাদের হাতে রাশীকৃত অক্ষর দিলেন ও কহিলেন, এই অক্ষরগুলি যথারীতি সাজাইয়া এক একটা কথা বাহির কর। মানুষেরা অক্ষর উলটাইয়া পালটাইয়া সাজাইতে আরম্ভ করিল, “গ্ৰীস” লিখিল, “রোম” লিখিল, “ফ্রিান্স” লিখিল, “ইংলন্ড” লিখিল । কিন্তু কে ভিতরে ভিতরে বলিতেছে যে, ঈশ্বর যে কথাটি লিখাইতে চান সেটি এখনো বাহির হইল না। এই নিমিত্ত মানুষেরা অসন্তুষ্ট হইয়া এক একবার অক্ষর ভাঙিয়া ফেলে ; ইহাকেই বলে বিপ্লব ।” কবি যাহা বলিয়াছেন আমি তাহাকে ঈষৎ পরিবর্তিত করিতে চাহি । আমি বলি কি, ঈশ্বর মর্ত্যভূমির অধিষ্ঠাতৃদেবতাকে মনুষ্য-নামক কতকগুলি সংখ্যা দিয়াছেন ও পূর্ণ সুখ (যাহার আর এক নাম মঙ্গল)-নামক অঙ্কফল দিয়াছেন । এবং পৃথিবীর পত্রে এই অঙ্কফলটি কষিবার আদেশ দিয়াছেন । সে যুগ-যুগান্তর ধরিয়া এই নিতান্ত দুরূহ অঙ্কটি কষিয়া আসিতেছে, এখনো কষা ফুরায় নি, কবে ফুরাইবে কে জানে ! তাহার এক একবার যখনি মনে হয় অঙ্কে ভুল হইল, তৎক্ষণাৎ সে সমস্তটা রক্ত দিয়া মুছিয়া ফেলে। ইহাকেই বলে বিপ্লব। নৌকা মানুষের মধ্যে এক একটা মাঝি আছে- তাহাদের না আছে দাড়, না আছে পাল, না আছে গুণ ; তাহাদের না আছে বুদ্ধি, না আছে প্রবৃত্তি, না আছে অধ্যবসায় । তাহারা ঘাটে নীেকা বাধিয়া স্রোতের জন্য অপেক্ষা করিতে থাকে । মাঝিকে জিজ্ঞাসা কর, “বাপু, বসিয়া আছ কেন ?” সে উত্তর দেয়, “আজ্ঞা, এখনো জোয়ার আসে নাই।” “গুণ টানিয়া চল না কেন ?” “আজ্ঞা, সে গুণটি নাই।” “জোয়ার আসিতে আসিতে তোমার কাজ যদি ফুরাইয়া যায় ?” “পাল-তুলা, দাড়টানা অনেক নীেকা যাইতেছে, তাহদের বরাত দিব।” অন্যান্য চলতি নীেকাসকল অনুগ্রহ করিয়া ইহাদিগকে কাছি দিয়া