পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ Գծ সেটা গোপন করতে হত। রাজপুতানীর মহলে এসে সে যেন মহিষীর পদ পেলে। এখানে তার আদরের অন্ত ছিল না। চারি দিকে তার দাসদাসী, সবই হিন্দু ঘরের ছিল। অবশেষে যৌবনের আবেগ এসে পৌঁছল তার দেহে। বাড়ির একটি ছেলে লুকিয়ে লুকিয়ে আনাগোনা শুরু করল কমলার মহলে, তার সঙ্গে সে মনে-মনে বাধা পড়ে গেল। তখন সে হবির খাকে একদিন বললে, “বাবা, আমার ধর্ম নেই, আমি যাকে ভালোবাসি সেই ভাগ্যবানই আমার ধর্ম। যে ধর্ম চিরদিন আমাকে জীবনের সব ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে, অবজ্ঞার আঁস্তাকুড়ের পাশে আমাকে ফেলে রেখে দিয়েছে, সে ধর্মের মধ্যে আমি তো দেবতার প্ৰসন্নতা কোনোদিন দেখতে পেলুম না । সেখানকার দেবতা আমাকে প্রতিদিন অপমানিত করেছে সে কথা আজও আমি ভুলতে পারি নে। আমি প্রথম ভালোবাসা পেলুম, বাপজান, তোমার ঘরে। জানতে পারলুম। হতভাগিনী মেয়েরও জীবনের মূল্য আছে। যে দেবতা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন সেই ভালোবাসার সম্মানের মধ্যে তাকেই আমি পুজো করি, তিনিই আমার দেবতা- তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন । তোমার মেজো ছেলে করিম, তাকে আমি মনের মধ্যে গ্রহণ করেছি- আমার ধর্মকর্ম ওরই সঙ্গে বাধা পড়েছে। তুমি মুসলমান করে নাও আমাকে, তাতে আমার আপত্তি হবে নাআমার নাহয় দুই ধৰ্মই থাকল।” এমনি করে চলল ওদের জীবনযাত্রা, ওদের পূর্বতন পরিজনদের সঙ্গে আর দেখাসাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনা রইল না। এ দিকে হবির খ্যা কমলা যে ওদের পরিবারের কেউ নয়, সে কথা ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা করলে- ওর নাম হল মেহেরজান । , ইতিমধ্যে ওর কাকার দ্বিতীয় মেয়ের বিবাহের সময় এল। তার বন্দোবস্তও হল পূর্বের মতো, আবার এল সেই বিপদ । পথের মধ্যে হুঙ্কার দিয়ে এসে পড়ল সেই ডাকাতের দল। শিকার থেকে একবার তারা বঞ্চিত হয়েছিল সে দুঃখ তাদের ছিল, এবার তার শোধ নিতে চায়। কিন্তু তারই পিছন পিছন আর এক হুঙ্কার এল, “খবরদার ?” “ঐরে, হবির খার চেলারা এসে সব নষ্ট করে দিলে।” কন্যাপক্ষীরা যখন কন্যাকে পালকির মধ্যে ফেলে রেখে যে যেখানে পেল দৌড় মারতে চায় তখন তাদের মাঝখানে দেখা দিল হবির খায়ের অর্ধচন্দ্ৰ-আঁকা পতাকা বাধা বর্শার ফলক । সেই বর্শা নিয়ে দাড়িয়েছে নিৰ্ভয়ে একটি রমণী । ) সরলাকে তিনি বললেন, “বোন, তোর ভয় নেই। তোর জন্য আমি তার আশ্রয় নিয়ে এসেছি সকলকে আশ্রয় দেন ! যিনি কারও জাত বিচার করেন না - ( “কাকা, প্ৰণাম তোমাকে । ভয় নেই, তোমার পা ছোব না। এখন ঐকে তোমার ঘরে নিয়ে যাও, একে কিছুতে অস্পৃশ্য করেনি। ককিকে বোলো অনেকদিন৷র্তার অনিচ্ছুক অন্নবস্ত্ৰে মানুষ হয়েছি, সে ঋণ যে আমি এমন করে আজ শুধতে পারব তা ভাবি নি। ওর জন্যে একটি রাঙা চেলী এনেছি, সে । এই নাও, আর একটি কিংখাবের আসন। আমার বোন যদি কখনো দুঃখে পড়ে তবে মনে থাকে যেন তার মুসলমান দিদি আছে, তাকে রক্ষা করবার জন্যে।” R8-R VIR Sd8S আষাঢ় ১৩৬২