পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S (t\o রবীন্দ্র-রচনাবলী বায়োকেমিস্ট্রি নিয়েছিস, শুনলি তো ? বিশ্বে রমণীর রমণীয়তা যে অংশে সেইটিকে কেটে ছিড়ে পুড়িয়ে গুড়িয়ে হাইড্রলিক প্রেস দিয়ে দলিয়ে সল্যুরিক অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে তোকে রিসর্চে লাগতে হবে।’ দেখে একবার দুষ্টুমি, আমি কোনোকালে বায়োকেমিস্ট্র নিই নি। ওর পোষা জীবকে নাচাবার জন্তে চাতুরী। তাই বলছি, ভয় নেই, মেয়েরা যাকে গাল দেয় তাকেও বিয়ে করতে পারে কিন্তু যাকে বিদ্রুপ করে তাকে নৈব নৈবচ। সব-শেষে বোকাটা বললে, ‘আজ স্পষ্ট বুঝলুম, পুরুষ তেমনি করেই নারীকে চায় যেমন করে মরুভূমি চায় জলকে মাটির তলার বোবা ভাষাকে উদ্ভিদ করে তোলবার জন্তে।’ এত হেসেছি । তারক। তুমি তো ঐ বললে। আমি একদিন ক্ষিতীশের তালি-দেওয়া মুখ নিয়ে একটু ঠাট্টার আভাস দিয়েছিলেম। বঁাশরি বলে উঠলেন, ‘দেখো লাহিড়ি, ওর মুখ দেখতে আমার পজিটিভ লি ভালো লাগে। আমি আশ্চর্ষ হয়ে বললেম, ‘তা হলে মুখখানা বিশুদ্ধ মডার্ন আর্ট। বুঝতে ধাধা লাগে। ওর সঙ্গে কথায় কে পারবে— ও বললে, ‘বিধাতার তুলিতে অসীম সাহস। যাকে ভালো দেখতে করতে চান তাকে সুন্দর দেখতে করা দরকার বোধ করেন না। র্তার মিষ্টান্ন ছড়ান ইতর লোকদেরই পাতে। বাই জোভ, সূক্ষ্ম বটে। শৈল। আর কি কোনো কথা নেই তোমাদের । ক্ষিতীশবাবু শুনতে পাবেন যে । সতীশ । ভয় নেই, ওখানে ফোয়ার ছুটছে, বাতাস উলটো দিকে, শোনা যাবে না । অর্চনা। আচ্ছা, তোমরা সব তাস খেলো, টেনিস খেলতে যাও, ওই মাতুষটার সঙ্গে হিসেব চুকিয়ে আসি গে। অর্চনা প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিয়ে গেল ক্ষিতীশের কাছে । দোহার গড়নের দেহ, সাজে-সজ্জায় কিছু অযত্ন আছে, হাসিখুশি ঢলঢলে মুখ, আয়ু পশ্চিমের দিকে এক ডিগ্রি হেলেছে। অৰ্চনা। ক্ষিতীশবাবু, পালিয়ে বসে আছেন আমাদের কাছ থেকে তার মানে বুঝতে পারি, কিন্তু খাবার টেবিলটাকে অস্পৃশ্য করলেন কোন দোষে। নিরাকার আইডিয়ায় আপনারা অভ্যস্ত, নিরাহার ভোজও কি তাই। আমরা বঙ্গনারী বঙ্গসাহিত্যের সেবার ভার পেয়েছি যে দিকটাতে সে দিকে আপনাদের পাকযন্ত্র । ক্ষিতীশ । দেবী, আমরা জোগাই রসাত্মক বাক্য, তা নিয়ে তর্ক ওঠে ; আপনার দেন রসাত্মক বস্তু, ওটা অন্তরে গ্রহণ করতে মতাঙ্কর ঘটে না ।