পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኧማ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী শিকলকে করে লোভনীয়। কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যে চিনতে যদি চাও তবে বিচার করে দেখো কোনটাতে ছাড়া দেয় আর কোনটা রাখে বেঁধে গ্রেমে মুক্তি, ভালোবাসায় বন্ধন। * جنستنساس سموه ক্ষিতীশ । শুনলেম চিঠি, তার পরে ? বঁাশরি। তার পরে তোমার মাথা ! অর্থাৎ তোমার কল্পনা । মনে মনে শুনতে পাচ্ছ না ? শিষ্যকে বলছেন, ভালোবাসা আমাকে নয়, অম্ভ কাউকেও নয়। নির্বিশেষ প্রেম, নির্বিকার আনন্দ, নিরাসক্ত আত্মনিবেদন, এই হল দীক্ষামন্ত্র । ক্ষিতীশ । তা হলে এর মধ্যে সোমশংকর আসে কোথা থেকে । বঁাশরি। প্রেমের সরকারী রাস্তায়, যে প্রেমে সকলেরই সমান অধিকার খোলা হাওয়ার মতো। তুমি লেখকপ্রবর, তোমার সামনে সমস্তাটা এই যে, খোলা হাওয়ায় সোমশংকরের পেট ভরবে কি । ক্ষিতীশ। কী জানি। সুচনায় তো দেখতে পাচ্ছি শূন্তপুরাণের পালা। বাশরি। কিন্তু, শূন্তে এসে কি ঠেকতে পারে কিছু। শেষ-মোকামে তো পৌছল গাড়ি, এ-পর্যন্ত রথ চালিয়ে এলেন সন্ন্যাসীসারথি । আডড-বদলের সময় যখন একদিন আসবে তখন লাগাম পড়বে কার হাতে। সেই কথাটা বলে না রিয়লিস্ট্‌ ! ক্ষিতীশ । যাকে ওঁরা নাক সিটকে প্রকৃতি বলেন, সেই মায়াবিনীর হাতে । পাখা নেই অথচ আকাশে উড়তে চায় যে স্থূল জীবট তাকে যিনি ধৰ্প করে মাটিতে ফেলে চটুকা দেন ভাঙিয়ে, সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গে লাগিয়ে দেন ধুলো । বঁাশরি। প্রকৃতির সেই বিদ্রপটাকেই বর্ণনা করতে হবে তোমাকে । ভবিতব্যের চেহারাটা জোর কলমে দেখিয়ে দাও । বড়ো নিষ্ঠুর । সীতা ভাবলেন, দেবচরিত্র রামচন্দ্র উদ্ধার করবেন রাবণের হাত থেকে ; শেষকালে মানবপ্রকৃতি রামচন্দ্র চাইলেন র্তাকে আগুনে পোড়াতে । একেই বলে রিয়ালিজম, নোঙরামিকে নয়। লেখে। লেখো, দেরি কোরো না, লেখো এমন ভাষায় যা হৃৎপিণ্ডের শিরাছেড়া ভাষা । পাঠকেরা চমকে উঠে দেখুক, এতদিন পরে বাংলার দুর্বল সাহিত্যে এমন একটা লেখা ফেটে বেরোল যা ঝোড়ো মেঘের বুকভাঙা সূর্যাস্তের রাগী আলোর মতো। ক্ষিতীশ । ইল, তোমার মনটা নেমেছে ভলক্যানোর জঠরাগ্নির মধ্যে। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, ওদের অবস্থায় পড়লে কী করতে তুমি । বঁাশরি। সন্ন্যাসীর উপদেশ সোনার জলে বাধানো খাতায় লিখে রাখতুম। তার পরে প্রবৃত্তির জোর কলমে তার প্রত্যেক অক্ষরের উপর দিতুম কালির জঁাচড় কেটে । প্রকৃতি জাদু লাগায় আপন মন্ত্রে, সন্ন্যাসীও জাদু করতেই চায় উলটো মন্ত্রে ।