পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ নামঞ্জুর গল্প আমাদের আসর জমেছিল পোলিটিক্যাল লঙ্কাকাণ্ডের পালায় । হাল আমলের উত্তরকাণ্ডে আমরা সম্পূর্ণ ছুটি পাই নি বটে, কিন্তু গলা ভেঙেছে ; তা ছাড়া সেই গ্নিদাহের খেলা বন্ধ । বঙ্গভঙ্গের রঙ্গভূমিতে বিদ্রোহীর অভিনয় শুরু হল। সবাই জানেন, এই নাট্যের পঞ্চম অঙ্কের দৃপ্ত আলিপুর পেরিয়ে পৌঁছল আওীমানের সমুদ্রকুলে। পারানির পাথেয় আমার যথেষ্ট ছিল, তবু গ্রহের গুণে এপারের হাজতেই আমার ভোগসমাপ্তি। সহযোগীদের মধ্যে ফাসিকাঠ পর্যন্ত যাদের সর্বোচ্চ প্রোমোশন হয়েছিল, তাদের প্রণাম করে আমি পশ্চিমের এক শহরের কোণে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় পসার জমিয়ে তুললেম । তখনো আমার বাবা বেঁচে । তিনি ছিলেন বাংলাদেশের এক বড়ো মহকুমার সরকারি উকিল । উপাধি ছিল রায়বাহাদুর। তিনি বিশেষ-একটু ঘটা করেই আমার বাড়ি বন্ধ করে দিলেন । র্তার হৃদয়ের সঙ্গে আমার যোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল কি না অন্তর্যামী জানেন, কিন্তু হয়েছিল পকেটের সঙ্গে । মনি-অর্ডারের সম্পর্ক পর্যন্ত ছিল না। যখন আমি হাজতে তখনই মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। আমার পাওনা শাস্তিটা গেল তার উপর দিয়েই । আমার পিসি বলে যিনি পরিচিত, তিনি আমার স্বোপার্জিত কিম্বা আমার পৈতৃক, তা নিয়ে কারও কারও মনে সংশয় আছে। তার কারণ, আমি পশ্চিমে যাবার পূর্বে র্তার সঙ্গে আমার সম্বন্ধ সম্পূর্ণই অব্যক্ত ছিল । তিনি আমার কে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকে তো থাক, কিন্তু তার স্নেহ না পেলে সেই আত্মীয়তার অরাজকতা-কালে আমাকে বিষম দুঃখ পেতে হত। তিনি আজন্ম পশ্চিমেই কাটিয়েছেন ; সেইখানেই বিবাহ, সেইখানেই বৈধব্য । সেইখানেই স্বামীর বিষয়সম্পত্তি। বিধবা তাই নিয়েই বন্ধ ছিলেন । তার আরও একটি বন্ধন ছিল । বালিকা অমিয়া । কষ্ঠাটি স্বামীর বটে, স্ত্রীর নয়। তার মা ছিল পিলিমার এক যুবতী দাসী, জাতিতে কাহার। স্বামীর মৃত্যুর পর