পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিমন্ত্রণ, সত্যবতী ভূলেই গেছেন, শোবার ঘরে দরজা বন্ধ, একতাল মাটি চটকে বেলা কাটছে। জ্ঞাতিরা বললে, বড়ো অহংকার। সন্তোষজনক জবাব দেবার জো নেই। এ-সব কাজেও ভালোমন্দর যে মূল্যবিচার চলে, সেটা বইপড় বিস্তার যোগেই মুকুন্দ জানতেন। আর্ট শব্দটার মাহাত্ম্যে শরীর রোমাঞ্চিত হত। কিন্তু, তার আপন গৃহিণীর হাতের কাজেও যে এই শব্দটার কোনো স্থান আছে এমন কথা মনে করতেই পারতেন না। এই মানুষটির স্বভাবটিতে কোথাও কঁাটাখোচা ছিল না। তার স্ত্রী অনাবশ্বক খেয়ালে অযথা সময় নষ্ট করেন, এটা দেখে তার হাসি পেত, সে হাসি মেহরসে ভরা। এ নিয়ে সংসারের লোক কেউ যদি কটাক্ষ করত। তিনি তখনই তার প্রতিবাদ করতেন। মুকুন্দর স্বভাবে অদ্ভূত একটা আত্মবিরোধ ছিল— ওকালতির কাজে ছিলেন প্রবীণ, কিন্তু ঘরের কাজে বিষয়বুদ্ধি ছিল না বললেই হয়। পয়সা র্তার কাজের মধ্যে দিয়ে যথেষ্ট বইত, কিন্তু ধ্যানের মধ্যে আটকা পড়ত না । সেইজন্ত মনটা ছিল মুক্ত ; অনুগত লোকদের পরে নিজের ইচ্ছে চালাবার জন্যে কখনো দৌরাত্ম্য করতে পারতেন না। জীবনযাত্রার অভ্যাস ছিল খুব সাদাসিধা, নিজের স্বাৰ্থ বা সেবা নিয়ে পরিজনদের পরে কোনোদিন অযথা দাবি করেন নি। সংসারের লোকে সত্যবতীর কাজে শৈথিল্য নিয়ে কটাক্ষ করলে মুকুন্দ তখনই সেটা থামিয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে আদালত থেকে ফেরবার পথে রাধাবাজার থেকে কিছু রঙ, - میوهها به - * پر به تهیه می گیة "گاه مماری কিছু রঙিন রেশম, রঙের পেনসিল কিনে এনে সত্যবতীর অজ্ঞাতসারে তার শোবার ঘরে কাঠের সিন্ধুকটার পরে সাজিয়ে রেখে আসতেন। কোনোদিন বা সত্যবতীর জাক একটা ছবি তুলে নিয়ে বলতেন, “বা, এ তো বড়ো স্বনীর হয়েছে।” একদিন একটা মামুষের ছবিকে উলটিয়ে ধরে তার পা দুটোকে পাখির মুগু বলে স্থির করলেন ; বললেন, “সতু, এটা কিন্তু বাধিয়ে রাখা চাই— বকের ছবি যা হয়েছে চমৎকার ” মুকুন্দ তার স্ত্রীর চিত্ররচনায় ছেলেমাহুষি কল্পনা করে মনে মনে যে-রসটুকু পেতেন, স্ত্রীও তার স্বামীর চিত্রবিচার থেকে ভোগ করতেন সেই একই রস । সত্যবতী মনে নিশ্চিত জানতেন, বাংলাদেশের আর-কোনো পরিবারে তিনি এত ধৈর্য, এত প্রশ্রয় আশা করতে পারতেন না। শিল্পসাধনায় তার এই দুৰ্নিবার উৎসাহকে কোনো ঘরে এত দরদের সঙ্গে পথ ছেড়ে দিত না । এইজন্তে যেদিন তার স্বামী তার কোনো রচনা নিয়ে অদ্ভূত অত্যুক্তি করতেন সেদিন সত্যবতী যেন চোখের জল সামলাতে পারতেন না। এমন দুর্লভ সৌভাগ্যকেও সত্যবতী একদিন হারালেন । মৃত্যুর পূর্বে তার স্বামী একটা কথা স্পষ্ট করে বুঝেছিলেন যে, তার ঋণজড়িত সম্পত্তির ভার এমন কোনো পাক লোকের হাতে দেওয়া দরকার ধার চালনার কৌশলে ফুটে নৌকোও পার হয়ে