পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী আর লুকোনো চলল না। আমার শ্বশুর অজিতকুমার ভট্টাচার্য। বনেদি পণ্ডিত-বংশে তার জন্ম । বাল্যকাল কেটেছে চতুষ্পাঠীর আবহাওয়ায়। পরে কলকাতায় এসে কলেজে নিয়েছেন এম. এ ডিগ্রি গণিতে। ফলিত জ্যোতিষে র্তার যেমন বিশ্বাস ছিল তেমনি ব্যুৎপত্তি। তার বাবা ছিলেন পাকা নৈয়ায়িক, ঈশ্বর তার মতে অসিদ্ধ; আমার শ্বশুরও দেবদেবী কিছুই মানতেন না তার প্রমাণ পেয়েছি। র্তার সমস্ত বেকার বিশ্বাস ভিড় করে এসে পড়েছিল গ্রহনক্ষত্রের উপর, একরকম গোড়ামি বললেই হয়। এই ঘরে জন্মেছে মুনেত্রা ; বাল্যকাল থেকে তার চার দিকে গ্রহনক্ষত্রের কড়া পাহারা । আমি ছিলুম অধ্যাপকের প্রিয় ছাত্র, স্থনেত্রাকেও তার পিতা দিতেন শিক্ষা । পরম্পর মেলবার স্বযোগ হয়েছিল বার বার । সুযোগটা যে ব্যর্থ হয় নি সে-খবরটা বেতার বিদ্যুদবার্তায় আমার কাছে ব্যক্ত হয়েছে। আমার শাশুড়ির নাম বিভাবতী । সাবেককালের আওতার মধ্যে র্তার জন্ম বটে, কিন্তু স্বামীর সংসর্গে তার মন ছিল সংস্কারমুক্ত, স্বচ্ছ। স্বামীর সঙ্গে প্রভেদ এই গ্রহনক্ষত্র তিনি একেবারেই মানতেন না, মানতেন আপন ইষ্টদেবতাকে । এ নিয়ে স্বামী একদিন ঠাট্টা করাতে বলেছিলেন, “ভয়ে ভয়ে তুমি পেয়াদাগুলোর কাছে সেলাম ঠুকে বেড়াও, আমি মানি স্বয়ং রাজাকে ।” স্বামী বললেন, “ঠকবে। রাজা থাকলেও যা না-থাকলেও তা, লাঠি ঘাড়ে নিশ্চিত আছে পেয়াদার দল।” i শাশুড়ি-ঠাকরুন বললেন, “ঠকব সেও ভালো । তাই বলে দেউড়ির দরবারে গিয়ে নাগরা জুতোর কাছে মাথা হেঁট করতে পারব না।” আমার শাশুড়ি আমাকে বড়ো স্নেহ করতেন। র্তার কাছে আমার মনের কথা ছিল অবারিত। অবকাশ বুঝে একদিন তাকে বললেম, “মা, তোমার নেই ছেলে, আমার নেই মা । মেয়ে দিয়ে আমাকে দাও তোমার ছেলের জায়গাটি । তোমার সম্মতি পেলে তার পরে পায়ে ধরব অধ্যাপকের ।” তিনি বললেন, “অধ্যাপকের কথা পরে হবে বাছা, আগে তোমার ঠিকুজি এনে দাও আমার কাছে।” দিলেম এনে। তিনি বললেন, “হবার নয়। অধ্যাপকের মত হবে না। অধ্যাপকের মেয়েটিও তার বাপেরই শিষ্য ।”