পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"లిట রবীন্দ্র-রচনাবলী গেছে আট-মাসে। টাইফয়েডে আমি যখন মরণাপন্ন, বাবার হল মৃত্যু। শেষে দেখি উইল জাল করে দাদা নিয়েছেন সমস্ত সম্পত্তি। আজ চাকরিই আমার একমাত্র ভরসা। তোমার মায়ের স্নেহ ছিল আমার জীবনের ধ্রুবতারা । পুজোর ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পথে নৌকোডুবি হয়ে স্বামীর সঙ্গে মারা গেলেন মেঘনা নদীর গর্ভে। দেখলেম, বিষয়বুদ্ধিহীন অধ্যাপক ঋণ রেখে গেছেন মোট অন্ধের ; সেই ঋণ স্বীকার করে নিলেম । কেমন করে জানব, এই সমস্ত বিপত্তি ঘটায় নি আমারই দুষ্টগ্ৰহ ? আগে থাকতে যদি জানতে আমাকে তো বিয়ে করতে না ?” মুনেত্রা কোনো উত্তর না করে আমাকে জড়িয়ে ধরলে । আমি বললেম, “সব দুঃখ দুৰ্ব্বক্ষণের চেয়ে ভালোবাসাই যে বড়ো, আমাদের জীবনে তার কি প্রমাণ হয় নি।” “নিশ্চয়, নিশ্চয় হয়েছে।” “মনে করে, যদি গ্রহের অনুগ্রহে তোমার আগেই আমার মৃত্যু হয়, সেই ক্ষতি কি বেঁচে থাকতেই আমি পূরণ করতে পারি নি।” “থাক্ থাক, আর বলতে হবে না।” “সাবিত্রীর কাছে সত্যবানের সঙ্গে একদিনের মিলনও যে চিরবিচ্ছেদের চেয়ে বড়ো ছিল, তিনি তো ভয় করেন নি মৃত্যুগ্রহকে ।” চুপ করে রইল স্থনেত্রা । আমি বললেম, “তোমার অরুণ ভালোবেসেছে শৈলেনকে, এইটুকু জানা যথেষ্ট ; বাকি সমস্তই থাক অজানা, কী বল, স্বনি।” স্বনেত্রা কোনো উত্তর করলে না । “তোমাকে যখন প্রথম ভালোবেসেছিলুম, বাধা পেয়েছি। আমি সংসারে দ্বিতীয়বার সেই নিষ্ঠুর দুঃখ আসতে দেব না কোনো গ্রহেরই মন্ত্রণায়। ওদের দুজনের ঠিকুজির অঙ্ক মিলিয়ে সংশয় ঘটতে দেব না কিছুতেই।” ঠিক সেই সময়েই সিড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। শৈলেন নেমে চলে যাচ্ছে। স্বনেত্রা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললে, “কী বাবা শৈলেন। এখুনি তুমি যাচ্ছ না কি।” শৈলেন ভয়ে ভয়েই বললে, “কিছু দেরি হয়েই গেছে, ঘড়ি ছিল না, বুঝতে পারি নি।” মুনেত্রা বললে, “না, কিছু দেরি হয় নি। আজ রাত্রে তোমাকে এখানেই থেয়ে যেতে হবে ।” একেই তো বলে প্রশ্রয়।