পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१¢९ রবীন্দ্র-রচনাবলী পোলিটিকাল মতভেদের জন্তে ইটালি যে দ্বীপান্তরবাসের বিধান করেছে সে কীরকম দুঃসহ নরকবাস, সে কথা সকলেরই জানা আছে। যুরোপীয় সভ্যতার আলোক যে-সব দেশ উজ্জ্বলতম করে জালিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রধান স্থান নিতে পারে জর্মনি । কিন্তু আজ সেখানে সভ্যতার সকল আদর্শ টুকরো টুকরো করে দিয়ে এমন অকস্মাৎ, এত সহজে উন্মত্ত দানবিকতা সমস্ত দেশকে অধিকার করে নিলে, এও তো অসম্ভব হল না ! যুদ্ধপরবর্তীকালীন যুরোপের বর্বর নির্দয়ত যখন আজ এমন নির্লজ্জভাবে চার দিকে উদঘাটিত হতে থাকল তখন এই কথাই বার বার মনে আসে, কোথায় রইল মানুষের সেই দরবার যেখানে মানুষের শেষ আপিল পোঁছবে আজ । মনুষ্যত্বের পরে বিশ্বাস কি ভাঙতে হবে— বর্বরতা দিয়েই কি চিরকাল ঠেকাতে হবে বর্বরতা। কিন্তু সেই নৈরাশ্বের মধ্যেই এই কথাও মনে আসে যে, দুৰ্গতি যতই উদ্ধতভাবে ভয়ংকর হয়ে উঠুক, তবু তাকে মাথা তুলে বিচার করতে পারি, ঘোষণা করতে পারি, তুমি আশ্রদ্ধেয়, অভিসম্পাত দিয়ে বলতে পারি “বিনিপাত”, বলবার জন্তে পণ করতে পারে প্রাণ এমন লোকও দুর্দিনের মধ্যে দেখা দেয়, এই তো সকল দুঃখের, সকল ভয়ের উপরের কথা। আজ পেয়াদার পীড়নে হাড় গুড়িয়ে যেতে পারে, তবুও তো আগেকার মতো হাতজোড় করে বলতে পারি নে, দিল্লীশ্বরে বা জগদীশ্বরে বা, বলতে পারি নে, তেজীয়ান যে তার কিছুই দোষের নয়। বরঞ্চ মুক্তকণ্ঠে বলতে পারি, তারই দায়িত্ব বড়ো, তারই আদর্শে তারই অপরাধ সকলের চেয়ে নিন্দনীয়। যে দুঃখী, যে অবমানিত, সে যেদিন স্তায়ের দোহাইকে অত্যাচারের সিংহগর্জনের উপরে তুলে আত্মবিশ্বত প্রবলকে ধিক্কার দেবার ভরসা ও অধিকার সম্পূর্ণ হারাবে, সেই দিনই বুঝব এই যুগ আপন শ্ৰেষ্ঠসম্পদে শেষকড়-পর্যন্ত দেউলে হল। তার পরে আস্থক কল্পান্ত । У\98 e বিবেচনা ও অবিবেচনা বাংলা দেশে একদিন স্বদেশপ্রেমের বান ডাকিল ; আমাদের প্রাণের ধারা হঠাৎ অসম্ভব রকম ফুলিয়া উঠিয়া পাড়ি ছাপাইয়া পড়ে আর কি। সেই বেগটা যে সত্য তাহার প্রমাণ এই যে, তাহার চাঞ্চল্যে কেবল আমাদের কাগজের নৌকাগুলাকে দোলা দেয় নাই, কেবল সভাতলেই করতালির তুফান উঠিয়া সমস্ত চুকিয় গেল না। সেদিন সমাজটাও যেন আগাগোড়া নড়িয়া উঠিল এমনতরো বোধ হইয়াছিল। এক মুহূর্তেই তাতের কাজে ব্রাহ্মণের ছেলেদের বাধা ছুটিয়া গেল ; ভদ্রসন্তান কাপড়ের