পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९७8 রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার পরে ক্রমে অবস্থার পরিবর্তন হইয়াছে। এখন যুরোপে রাজার জায়গাট রাষ্ট্ৰতন্ত্র দখল করিতেছে, এখন লড়াইয়ের চেয়ে নীতিকৌশল প্রধান হইয়া উঠিয়াছে। যুদ্ধের আয়োজন পূর্বের চেয়ে বাড়িয়াছে বই কমে নাই কিন্তু এখন যোদ্ধার চেয়ে যুদ্ধবিদ্যা বড়ে ; এখন বীর্ষের আসনে বিজ্ঞানের অভিষেক হইয়াছে। কাজেই যুরোপে সাবেককালের ক্ষত্রিয়বংশীয়েরা এবং সেই সকল ক্ষত্রিয়-উপাধিধারীরা যদিও এখনো আপনাদের আভিজাত্যের গৌরব করিয়া থাকে তবু লোকসাধারণের সঙ্গে তাহাদের স্বাভাবিক সম্বন্ধ ঘুচিয়া গেছে। তাই রাষ্ট্ৰচালনার কাজে তাহাদের আধিপত্য কমিয়া আসিলেও সেটাকে জাগাইয়া তুলিবার জোর তাহাদের নাই। 廳 শক্তির ধারাটা এখন ক্ষত্রিয়কে ছাড়িয়া বৈশ্বের কুলে বহিতেছে। লোকসাধারণের কাধের উপরে তাহারা চাপিয়া বসিয়াছে । মানুষকে লইয়া তাহারা আপনার ব্যবসায়ের যন্ত্র বানাইতেছে। মানুষের পেটের জালাই তাহাদের কলের স্টীম উৎপন্ন করে । পূর্বকালের ক্ষত্রিয়নায়কের সঙ্গে মানুষের যে-সম্বন্ধ ছিল সেটা ছিল মানবসম্বন্ধ । দুঃখ কষ্ট অত্যাচার যতই থাক, তবু পরম্পরের মধ্যে হৃদয়ের আদানপ্রদানের পথ ছিল। এখন বৈশ্ব মহাজনদের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ যান্ত্রিক। কর্মপ্রণালী নামক প্রকাগু একটা জাতা মানুষের আর-সমস্তই গুড়া করিয়া দিয়া কেবল মজুরটুকুমাত্র বাকি রাখিবার চেষ্টা করিতেছে । , i ধনের ধর্মই অসাম্য। জ্ঞান ধর্ম কলাসৌন্দর্য পাচজনের সঙ্গে ভাগ করিলে বাড়ে বই কমে না, কিন্তু ধন জিনিসটাকে পাচজনের কাছ হইতে শোষণ করিয়া লইয়া পাচজনের হাত হইতে তাহাকে রক্ষণ না করিলে সে টে“কে না। এইজন্য ধনকামী নিজের গরজে দারিদ্র্য স্বষ্টি করিয়া থাকে । তাই ধনের বৈষম্য লইয়া যখন সমাজে পার্থক্য ঘটে তখন ধনীর দল সেই পার্থক্যকে সমূলে ঘূচাইতে ইচ্ছা করে না, অথচ সেই পার্থক্যটা যখন বিপদজনক হইয় উঠে তখন বিপদটাকে কোনোমতে ঠেকে দিয়া ঠেকাইয়া রাখিতে চায়। তাই ও দেশে শ্রমজীবীর দল যতই গুমরিয়া গুমরিয়া উঠিতেছে ততই তাহাদিগকে ক্ষুধার অন্ন না দিয়া ঘুম-পাড়াইবার গান গাওয়া হইতেছে ; তাহাদিগকে অল্পম্বর এটা-ওটা দিয়া কোনোমতে ভুলাইয়া রাখিবার চেষ্টা। কেহ বলে উহাদের বাস। একটু ভালো করিয়া দাও, কেহ বলে যাহাতে উহারা দু চামচ স্থপ খাইয়া কাজে যাইতে পারে তাহার বন্দোবস্ত করে, কেহ-ব। তাহাদের বাড়িতে গিয়া মিষ্টমুখে কুশল জিজ্ঞাসা করে, শীতের দিনে কেহ বা আপন উৎত্ত গরম কাপড়টা তাহাদিগকে পাঠাইয়া দেয়।