পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$48 রবীন্দ্র-রচনাৰলী মুখ্য করিয়া তোলে তবে সেই ধর্ম যত বড়ে অশান্ডির কারণ হয়, এমন আর-কিছুই না। এই ডগমা অর্থাৎ শাস্ত্রমতকে বাহির হইতে পালন-করা লইয়া যুরোপের ইতিহাস কতবার রক্তে লাল হইয়াছে । অহিংসাকে যদি ধর্ম বলো, তবে সেটাকে কর্মক্ষেত্রে দুঃসাধ্য বলিয়া ব্যবহারে না মানিতে পারি, কিন্তু বিশুদ্ধ আইডিয়ালের ক্ষেত্রে তাহাকে স্বীকার করিয়া ক্রমে সে দিকে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব নহে । কিন্তু বিশেষ শাস্ত্রমতের অকুশাসনে বিশেষ করিয়া যদি কেবল বিশেষ পশুহত্যা না করাকেই ধর্ম বলা যায় এবং সেইটে জোর করিয়া যদি অম্ভ ধর্মমতের মানুষকেও মানাইতে চেষ্টা করা হয়, তবে মাছুষের সঙ্গে মাকুষের বিরোধ কোনোকালেই মিটিতে পারে না । নিজে ধর্মের নামে পশুহত্যা করিব অথচ অষ্ঠে ধর্মের নামে পশুহত্যা করিলেই নরহত্যার আয়োজন করিতে থাকিব, ইহাকে অত্যাচার ছাড়া আর-কোনো নাম দেওয়া যায় না। আমাদের আশা এই যে, চিরদিন আমাদের ধর্ম আচারপ্রধান হইয়া থাকিবে না । আরো-একটি আশা আছে, একদিন হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দেশহিতসাধনের একই রাষ্ট্রীয় আইডিয়াল যদি আমাদের রাষ্ট্ৰতন্ত্রে বাস্তব হইয়া উঠে তবে সেই অস্তরের ষোগে বাহিরের সমভ পার্থক্য তুচ্ছ হইয়া যাইবে। অল্পদিন হইল, রেলগাড়িতে আমার এক ইংরেজ সঙ্গী জুটিয়াছিল। তিনি বেহার অঞ্চলের হাঙ্গামার প্রসঙ্গে গল্প করিলেন— সাহাবাদে কিম্বা কোনো একটা জায়গায় ইংরেজ কাপ্তেন সেখানকার এক জমিদারকে বিন্দ্রপ করিয়া বলিয়াছিলেন, “তোমার রায়তদের তোমরা তো ঠেকাইতে পারিলে না । তোমরাই আবার হোমরুল চাও ” জমিদার কী জবাব করিলেন শুনি নাই । সম্ভবত তিনি লম্বা সেলাম করিয়া বলিয়াছিলেন, “না সাহেব, আমরা হোমরুল চাই না, আমরা অযোগ্য অধম । আপাতত আমার রায়তদের তুমি ঠেকাও।” বেচার জানিতেন হোমরুল তখন সমুদ্রপারের স্বপ্নলোকে, কাপ্তেন ঠিক সম্মুখেই, আর হাঙ্গামাটা কাধের উপর চড়িয়া বসিয়াছে । আমি বলিলাম, “হিন্দুমুসলমানের এই দাঙ্গাট হোমরুলের অধীনে তো ঘটে নাই । নিরস্ত্র জমিদারটি অক্ষমতার অপবাদে বোধ করি একবার সেনাপতি-সাহেবের ফৌজের দিকে নীৱৰে তাকাইয়াছিলেন । উপায় রহিল একজনের হাতে আর প্রতিকার করিবে আর-একজনে, এমনতরো শ্রমবিভাগের কথা আমরা কোথাও শুনি নাই । বাংলাদেশেও ঠিক স্বদেশী উত্তেজনার সময়, শুধু জামালপুরের মতো মফস্বলে নয়, একেবারে কলিকাতার বড়োবাজারে হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের উপজব প্রচণ্ড হইয়াছিল– সেটা তো শাসনের কলঙ্ক, শুধু শালিতের নয়। এইরূপ কাগু যদি