পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ونهب খেয়াল, কেউ বলেছে এ হচ্ছে আনন্দময়ের আনন। আর যারা বলেছে, এ হচ্ছে মায়া, অর্থাৎ যা নেই তারই থাকা, তাদের কথা ছেড়ে দিলুম। - আমার থাকাটা শক্তির প্রকাশ, না, প্রীতির প্রকাশ, এইটে ষে-যেমন মনে করে সে সেইভাবে জীবনের লক্ষ্যকে স্থির করে। শক্তিতে আমাদের যে-মূল্য দেয় তার এক চেহারা, আর প্রতিতে আমাদের যে-মূল্য দেয় তার চেহারা সম্পূর্ণ আলাদা। শক্তির জগতে আমার অহংকারের যে দিকে গতি, প্রীতির জগতে আমার অহংকারের গতি ঠিক তার উলটাে দিকে। শক্তিকে মাপা যায় ; তার সংখ্যা, তার ওজন, তার বেগ সমস্তেরই আয়তন গণিতের অঙ্কের মধ্যে ধরা পড়ে। তাই যারা শক্তিকেই চরম বলে জানে তারা আয়তনে বড়ো হতে চায়। টাকার সংখ্যা, লোকের সংখ্যা, উপকরণের সংখ্যা, সমস্তকেই তারা কেবল বহুগুণিত করতে থাকে । এইজন্তেই সিন্ধিলাভের কামনায় এরা অষ্ঠের অর্থ, অষ্ঠের প্রাণ, অষ্ঠের অধিকারকে বলি দেয়। শক্তিপূজার প্রধান অঙ্গ বলিদান। সেই বলির রক্তে পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে । o বস্তুতন্ত্রের প্রধান লক্ষণই হচ্ছে তার বাহপ্রকাশের পরিমাপ্যতা— অর্থাৎ তার সসীমত। মানুষের ইতিহাসে যত-কিছু দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা তার অধিকাংশই এই সীমানার চৌহদি নিয়ে। পরিমাণের দিকে নিজের সীমানা অত্যন্ত বাড়াতে গেলেই পরিমাণের দিকে অষ্ঠের সীমানা কাড়তে হয়। অতএব শক্তির অহংকার যেহেতু আয়তন বিস্তারেরই অহংকার, সেইজষ্ঠে এই দিকে দাড়িয়ে খুব লম্বা দূরবীন কষলেও লড়াইয়ের রক্তসমুদ্র পেরিয়ে শাস্তির কুল কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না । কিন্তু এই যে বস্তুতান্ত্রিক বিশ্ব, এই যে শক্তির ক্ষেত্র, এর আয়তনের অঙ্কগুলো যোগ দিতে দিতে হঠাৎ এক জায়গায় দেখি তেরিজটা একটানা বেড়ে চলবার দিকেই ছুটছে না। বেড়ে চলবার তত্বের মধ্যে হঠাৎ উচোট খেয়ে দেখা যায় সুষমার তত্ব পথ আগলে । দেখি কেবলই গতি নয়, যতিও আছে । ছন্দের এই অমোঘ নিয়মকে শক্তি যখন অন্ধ অহংকারে অতিক্রম করতে যায় তখনি তার আত্মঘাত ঘটে । মাছুষের ইতিহাসে এইরকম বার বার দেখা যাচ্ছে । সেইজন্তে মানুষ বলেছে, অতি দৰ্পে হত। লঙ্কা। সেইজন্তে ব্যাবিলনের অত্যুদ্ধত সৌধচুড়ার পতনবার্তা এখনো মানুষ স্মরণ করে । i t W তবেই দেখছি, শক্তিতত্ত্ব, যার বাস্থপ্রকাশ আয়তনে, সেটাই চরমতম এবং