পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

19ళ భీ রবীন্দ্র-রচনাবলী অমনি শারীরচৈতন্তের ফাক বুজে যায়, সমস্ত চৈতন্ত ব্যথায় ভরে ওঠে। মন যে ফাকা চায়, দুঃখে সেই ফাকা পায় না। স্থানের ফাকা না পেলে যেমন ভালো করে বঁাচা যায় না, তেমনি সময়ের ফাক, চিন্তার ফাকা না পেলে মন বড়ো করে ভাবতে পারে না ; সত্য তার কাছে ছোটো হয়ে যায়। সেই ছোটাে-সত্য মিটমিটে আলোর মতো ভয়কে প্রশ্ৰয় দেয়, দৃষ্টিকে প্রতারণা করে এবং মানুষের ব্যবহারের ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করে রাখে। আজকের দিনে ভারতবাসী হয়ে নিজের সকলের চেয়ে বড়ো দেীর্ভাগ্য অনুভব করছি এই জানলার কাছটাতে এসে । আমাদের ভাগ্যে জানলার ফাক গেছে বুজে ; জীবনের এ-কোণে ও-কোণে একটু আধটু যা ছুটির পোড়ো জায়গা ছিল তা কাটাগাছে ভরে গেল । প্রাচীন ভারতে একটা জিনিস প্রচুর ছিল, সেটাকে আমরা খুব মহামূল্য বলেই জানি, সে হচ্ছে সত্যকে খুব বড়ো করে ধ্যান করবার এবং উপলদ্ধি করবার মতো মনের উদার অবকাশ । ভারতবর্ষ একদিন মুখ এবং দুঃখ, লাভ এবং অলাভের উপরকার সবচেয়ে বড়ো ফাকায় দাড়িয়ে সেই সত্যকেই সুস্পষ্ট করে দেখছিল, যং লন্ধা চাপরং লাভং মন্ততে নাধিকং ততঃ । কিন্তু আজকের দিনে ভারতবর্ষের সেই ধ্যানের বড়ো অবকাশটি নষ্ট হল । আজকের দিনে ভারতবাসীর আর ছুটি নেই ; তার মনের অন্তরতম ছুটির উৎসটি শুকিয়ে শুকিয়ে মরে গেল, বেদনায় তার সমস্ত চৈতন্তকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে । তাই আজ যখনই এই বাতায়নে এসে বসেছি, অমনি দেখি আমাদের আঙিনা থেকে উঠছে দুর্বলের কান্না ; সেই দুর্বলের কান্নায় আমাদের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সমস্ত অবকাশ একেবারে পরিপূর্ণ। আজকের দিনে দুর্বল যত ভয়ংকর দুর্বল, জগতের ইতিহাসে এমন আর-কোনো দিনই ছিল না । বিজ্ঞানের কৃপায় বাহুবল আজ নিদারুণ দুর্জয় । পালোয়ান আজ জল স্থল আকাশ সর্বত্রই সিংহনাদে তাল ঠুকে বেড়াচ্ছে। আকাশ একদিন মানুষের হিংসাকে আপন সীমানায় ঢুকতে দেয় নি। মাহুষের কুরতা আজ সেই শূন্তকেও অধিকার করেছে। সমুদ্রের তলা থেকে আরম্ভ করে বায়ুমণ্ডলের প্রান্ত পর্যন্ত সব জায়গাতেই বিদীর্ণহীদয়ের রক্ত বয়ে চলল । 鸣 এমন অবস্থায়, যখন সবলের সঙ্গে দুর্বলের বৈষম্য এত অত্যন্ত বেশি, তখনও যদি দেখা যায় এতবড়ো বলবানেরও ভীরুতা ঘুচল না, তা হলে সেই ভীরুতার কারণটা ভালো করে ভেবে দেখতে হবে। ভেবে দেখা দরকার এইজন্তে যে, স্কুরোপে