পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর , , ©® ዊ ডাক্তার মুঞ্জের রিপোর্টের আর-একটা অংশে তিনি বলছেন, আট শো বৎসর আগে মালাবারের হিন্দুরাজা ব্রাহ্মণমন্ত্রীদের পরামর্শে র্তার রাজ্যে আরবদের বাসস্থাপনের জন্তে বিশেষভাবে সুবিধা করে দিয়েছিলেন। এমন-কি হিন্দুদের মুসলমান করবার কাজে তিনি আরবদের এতদূর প্রশ্ৰয় দিয়েছিলেন যে, তার আইন-মতে প্রত্যেক জেলেপরিবার থেকে একজন হিন্দুকে মুসলমান হতেই হত। এর প্রধান কারণ, ধর্মপ্রাণ রাজা ও তার মন্ত্রীরা সমুদ্রযাত্র ধর্মবিরুদ্ধ বলেই মেনে নিয়েছিলেন ; তাই মালাবারের সমুদ্রতীরবর্তী রাজ্যরক্ষার ভার সেই সকল মুসলমানের হাতেই ছিল, সমুদ্রযাত্রার বৈধতা সম্বন্ধে যারা বুদ্ধিকে মানত, মহুকে মানত না। বুদ্ধিকে না মেনে অবুদ্ধিকে মানাই যাদের ধর্ম রাজাসনে বসেও তার স্বাধীন হয় না। তারা কর্মের মধ্যাহকালকেও সুপ্তির নিশীথরাত্রি বানিয়ে তোলে। এই জন্তেই তাদের ঠিক দুপ পর বেলা ভূতে মারে ঢেল । t মালাবারের রাজা একদা নিজে রাজার মুখোষ-মাত্র পরে অবুদ্ধিকে রাজাসন ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই অবুদ্ধি মালাবারের হিন্দুসিংহাসনে এখনো রাজা আছে। তাই হিন্দু এখনো মার খায় আর উপরের দিকে তাকিয়ে বলে, ভগবান আছেন। সমস্ত ভারতবর্ষ জুড়ে আমরা অবুদ্ধিকে রাজা করে দিয়ে তার কাছে হাত জোড় করে আছি । সেই অবুদ্ধির রাজত্বকে— সেই বিধাতার বিধিবিরুদ্ধ ভয়ংকর ফাকটাকে কখনো পাঠান, কখনো মোগল, কখনো ইংরেজ এসে পূর্ণ করে বসছে। বাইরে থেকে এদের মারটাকেই দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু এরা হল উপলক্ষ্য। এর এক-একটা ঢেলামাত্র, এরা ভূত নয়। আমরা মধ্যাহ্নকালের আলোতেও বুদ্ধির চোখ বুজিয়ে দিয়ে অবুদ্ধির ভূতকে ডেকে এনেছি, সমস্ত তারই কর্ম। তাই ঠিক দু’প প’র বেলায় যখন জাগ্রত বিশ্বসংসার চিন্তা করছে, কাজ করছে, তখন পিছন দিক থেকে কেবল আমাদেরই পিঠের উপর— ঠিক দুপ পর বেলা ভূতে মারে ঢেলা ৷ আমাদের লড়াই ভূতের সঙ্গে, আমাদের লড়াই অবুদ্ধির সঙ্গে, আমাদের লড়াই অবাস্তবের সঙ্গে । সেই আমাদের চারি দিকে ভেদ এনেছে, সেই আমাদের কাধের উপর পরবশতাকে চড়িয়ে দিয়েছে— সেই আমাদের এতদূর অন্ধ করে দিয়েছে যে যখন চীৎকারশব্দে ঢেলাকে গাল পেড়ে গলা ভাঙছি তখন সেই ভূতটাকে পরমাষ্ট্ৰীয় পরমারাধ্য বলে তাকেই আমাদের সমস্ত বাস্তুভিটে দেবত্র করে ছেড়ে দিয়েছি। চেলার দিকে তাকালে আমাদের পরিত্রাণের আশা থাকে না ; কেননা জগতে চেলা অসংখ্য,