পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর 8 ი ა আহবান করিতেছেন, বলিতেছেন : তোমরা যে অমৃতের পুত্র এই কথা জানো এবং এই কথা জানাও ; মৃত্যুছায়াচ্ছন্ন পৃথিবীকে এই সত্য দান করে যে, কোনো কর্মপ্রণালীতে নয়, রাষ্ট্ৰতন্ত্রে নয়, বাণিজ্যব্যবস্থায় নয়, যুদ্ধ-অস্ত্রের নিদারুণতায় নয়— তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি। নান্তঃ পন্থা বিদ্যতে আয়নায় ॥ মাঘ, ১৩২৪ চরকা চরকা-চালনায় উৎসাহ প্রকাশ করি নি অপবাদ দিয়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র আমাকে ছাপার কালীতে লাঞ্ছিত করেছেন। কিন্তু দণ্ড দেবার বেলাতেও আমার পরে সম্পূর্ণ নির্মম হতে পারেন না বলেই আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলকেও আমার সঙ্গে এক কলঙ্কের রসায়নে মিল করিয়েছেন । এতে আমার ব্যথা দূর হল, তা ছাড়া একটা অত্যন্ত পুরোনো কথার নতুন প্রমাণ জুটল এই যে, কারো সঙ্গে কারে বা মতের মিল হয়, কারে সঙ্গে বা হয় না । অর্থাৎ, সকল মানুষে মিলে মৌমাছির মতো একই নমুনার চাক বাধবে, বিধাতা এমন ইচ্ছে করেন নি। কিন্তু সমাজবিধাতারা কখনো কখনো সেইরকম ইচ্ছা করেন । র্তারা কাজকে সহজ করবার লোভে মানুষকে মাটি করতে কুষ্ঠিত হন না। তারা ছাটাই-কলের মধ্যে মানুষ-বনস্পতিকে চালিয়ে দিয়ে ঠিক সমান মাপের হাজার হাজার সরু সরু দেশলাই কাঠি বের করে আনেন। বন্তৰ্দ্ৰব্যকে এরকম পণ্যদ্রব্য করলে বনদেবতারা চুপ করে থাকেন, কিন্তু মানুষের বুদ্ধিকে কাজের খাতিরে মৌমাছির বুদ্ধি করে তুললে নারায়ণের দরবারে হিসাবনিকাশের দিনে জরিমানায় দেউলে হবার ভয় আছে । ছোটো বয়সে জগন্নাথের ঘাটে জলযাত্রার প্রয়োজনে যখন যেতেম, নানা পান্সির মাঝি হাত ধরে টানাটানি করত । কিন্তু কোনো একটার পরে যখন অভিরুচির পক্ষপাত প্রকাশ করা যেত তখন সেজন্তে কারো কাছ থেকে শাসনভয় ছিল না । কেননা পান্সি ছিল অনেক, যাত্রী ছিল অনেক, তাদের গম্যস্থানও ছিল অনেক । কিন্তু, যদি দেশের উপর তারকেশ্বরের এমন একটা স্বপ্ন থাকত যে, তারণের জন্তে শুধু একটিমাত্র পান্সিই পবিত্র, তবে তার প্রবল পাণ্ডাদের জবৰ্দস্তি ঠেকাত কে । এ দিকে মানবচরিত্র ঘাটে দাড়িয়ে কেঁদে মরত, ওরে পালোয়ান, কুল যদি বা একই হয়, ঘাট যে নানা— কোনোটা উত্তরে কোনোটা দক্ষিণে । وا R| 8 چ l