পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর 8२१ থেকে সেইটেই গোড়াকার সমস্ত। তুমি সাবেক ফ্যাশানের সাবধানী মানুষ, আস্তাবলের খবরটা আগে চাও। এ দিকে হাল ফ্যাশানের উৎসাহী মানুষ কোচ্‌বাক্সে চড়ে বসে অস্থিরভাবে পা ঘষছে ; ঘরে আগুন লাগার উপমা দিয়ে সে বলছে, অতি শীঘ্র পৌছনো চাই, এইটেই একমাত্র জরুরি কথা । অতএব ঘোড়ার খবর নেওয়া নিছক সময় নষ্ট করা। সব আগে দরকার গাড়িতে চড়ে বসা । তোমার ‘রায়তের কথা’ সেই ঘোড়ার কথা, যাকে বলা যেতে পারে গোড়ার কথা । ९ কিন্তু ভাবনার কথা এই যে, বর্তমান কালে একদল জোয়ান মানুষ রায়তের দিকে মন দিতে শুরু করেছেন। সব আগে তার হাতের গুলি পাকাচ্ছেন। বোঝা যাচ্ছে, র্তারা বিদেশে কোথাও একটা নজির পেয়েছেন। আমাদের মন যখন অত্যন্ত আড়ম্বরে স্বাদেশিক হয়ে ওঠে তখনও দেখা যায়, সেই আড়ম্বরের সমস্ত মালমসলার গায়ে ছাপ মারা আছে "Made in Europe' । যুরোপে প্রকৃতিগত ও অবস্থাগত কারণের স্বাভাবিক বেগে মানুষ সোশ্বালিজম, কমু্যনিজম, সিণ্ডিক্যালিজম প্রভৃতি নানাপ্রকার সামাজিক পরিবর্তনের পরখ করছে । কিন্তু আমরা যখন বলি, রায়তের ভালো করব, তখন যুরোপের বাধি বুলি ছাড়া আমাদের মুখে বুলি বেরোয় না। এবার পূর্ববঙ্গে গিয়ে দেখে এলুম, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুশাঙ্কুরের মতো ক্ষণভঙ্গুর সাহিত্য গজিয়ে উঠছে। তারা সব ছোটো ছোটো এক-একটি রক্তপাতের ধ্বজা । বলছে, পিষে ফেলো, দলে ফেলো ; অর্থাৎ ধরণী নির্জমিদার নির্মহাজন হোক। যেন জবৰ্দস্তির দ্বারা পাপ যায়, যেন অন্ধকারকে লাঠি মারলে সে মরে । এ কেমন, যেন বৌয়ের দল বলছে, শাশুড়িগুলোকে গুগু লাগিয়ে গঙ্গাযাত্রা করাও, তা হলেই বধূরা নিরাপদ হবে । ভুলে যায় যে, মরা শাশুড়ির ভূত ঘাড়ে চেপে তাদের শাশুড়িতর শাশুড়িতম করে তুলতে দেরি করে না। আমাদের দেশের শাস্ত্রে বলে, বাইরের থেকে আত্মহত্যা করে ম’লেই ভববন্ধন ছেদন করা যায় না— স্বভাবের ভিতর থেকে বন্ধনের মূলচ্ছেদ করতে হয়। যুরোপের স্বভাবট মারমুখো। পাপকে ভিতর থেকে মারতে সময় লাগে– তাদের সে তর সয় না, তারা বাইরে থেকে মানুষকে মারে। একদিন ইংরেজের নকল করে আমাদের ছেড়া পলিটিক্স নিয়ে পার্লামেনীয় রাজনীতির পুতুলখেলা খেলতে বসেছিলেম। তার কারণ, সেদিন পলিটিকসের আদর্শটাই যুরোপের অন্ত সব-কিছুর চেয়ে আমাদের কাছে প্রত্যক্ষগোচর ছিল। তখন যুরোপীয় যে সাহিত্য আমাদের মন দখল করেছে তার মধ্যে মাসিনি