পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর 8 OS স্বামী শ্রদ্ধানন্দ আমাদের দেশে যারা সত্যের ব্রত গ্রহণ করবার অধিকারী এবং সেই ব্রতকে প্রাণ দিয়ে যারা পালন করবার শক্তি রাখেন তাদের সংখ্যা অল্প বলেই দেশের এত দুৰ্গতি । এমন চিত্তদৈন্ত যেখানে, সেখানে স্বামী শ্রদ্ধানন্দের মতো অতবড়ো বীরের এমন মৃত্যু যে কতদূর শোকাবহ তার বর্ণনায় প্রয়োজন নেই। এর মধ্যে একটি কথা এই আছে যে, তার মৃত্যু যতই শোচনীয় হোক, সে মৃত্যুতে তার প্রাণ র্তার চরিত্র ততই মহীয়ান হয়েছে। বারে বারে ইতিহাসে দেখা যায়, নিজের সমস্ত দিয়ে যারা কল্যাণব্রতকে গ্রহণ করেছেন অপমান ও অপমৃত্যু তাদের ললাটে জয়তিলক এমনি করেই একেছে। মহাপুরুষরা আসেন প্রাণকে মৃত্যুর উপরেও জয়ী করতে, সত্যকে জীবনের সামগ্রী করে তুলতে। আমাদের খাদ্যদ্রব্যে প্রাণ দেবার যা উপকরণ রয়েছে তা বায়ুতে আছে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারেও আছে । কিন্তু, যতক্ষণ তা উদ্ভিদে প্রাণীতে জৈব আকার না ধারণ করে ততক্ষণ প্রাণের পুষ্টি হয় না। সত্য সম্বন্ধেও সে কথা খাটে। শুধুমাত্র বাক্যের হাওয়া থেকে আকর্ষণ করে নিয়ে তাকে জীবনগত করবার শক্তি ক’জনারই বা আছে । সত্যকে জানে অনেক লোকে, তাকে মানে সেই মানুষ যে বিশেষ শক্তিমান ; প্রাণ দিয়ে তাকে মানার দ্বারাই সত্যকে আমরা সকল মানুষের করে দিই। এই মানতে পারার শক্তিটাই মস্ত জিনিস। এই শক্তির সম্পদ র্যারা সমাজকে দেন তাদের দান মহামূল্য ; সত্যের প্রতি সেই নিষ্ঠার আদর্শ শ্রদ্ধানন্দ এই দুর্বল দেশকে দিয়ে গেছেন। তার সাধনা-পরিচয়ের উপযোগী যে নাম তিনি গ্রহণ করেছিলেন সেই নাম তার সার্থক । সত্যকে তিনি শ্রদ্ধা করেছেন । এই শ্রদ্ধার মধ্যে স্থষ্টিশক্তি আছে। সেই শক্তির দ্বারা তার সাধনাকে রূপমূর্তি দিয়ে তাকে তিনি সজীব করে গেছেন। তাই তার মৃত্যুও আলোকের মতো হয়ে উঠে তার শ্রদ্ধার সেই ভয়হীন ক্ষয়হীন ক্লান্তিহীন অমৃতচ্ছবিকে উজ্জল করে প্রকাশ করেছে। সত্যের প্রতি শ্রদ্ধার এই ভূমানন্দকে তার চরিত্রের মধ্যে আজ আমরা যেন সার্থক আকারে দেখতে পারি। এই সার্থকতা বাহ ফলে নয়, নিজেরই অকৃত্রিম বাস্তবতায়। অপঘাতের এই-যে আঘাত শুধু মহাপুরুষেরাই একে সহ করতে পারেন, শুধু তাদের পক্ষেই এর কোনো অর্থ নেই। যারা মরণকে ক্ষুদ্র স্বার্থের উর্ধ্বে তুলতে পেরেছেন জীবন থাকতেই তারা অমৃতলোকে উত্তীর্ণ। কিন্তু, মৃত্যুর গুপ্তচর তো শ্রদ্ধানন্দের আয়ু হরণ করেই ফিরে যাবে না। ধর্মবিদ্রোহী ধর্মান্ধতার কাধে চড়ে রক্তকলুষিত যে বীভৎসতাকে নগরের পথে পথে সে বিস্তার করেছিল অনতিকাল পূর্বেই, সে