পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b's রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘মানসী (পৃ ৮৭ ) কবিতা রচনার ইতিহাস নবজাতক গ্রন্থের ‘সাড়ে নটা' (পৃ ৪১) কবিতার সহিত অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এই প্রসঙ্গে ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থের নিম্নোদ্ধৃত বিবরণ প্রণিধানযোগ্য— সকাল সাড়ে নটা দশটার সময় খাওয়া হয়ে গেলে বসবার ঘরে এসে বসতেন একটা চোঁকিতে, হাতে থাকত একটা বই বা কোনো মাসিক পত্ৰ— রেডিওতে বাজত সুশ্রাব্য অশ্রাব্য মেশানো প্রোগ্রাম, কিছু শুনতেন, কিছু শুনতেন না। “ইয়োরোপের সংগীত শুনছিলুম গো আর্ষে, কী আশ্চর্য এই যন্ত্রটা। কোন সুদূর থেকে কত রাজ্য পার হয়ে ভেসে আসছে এই স্বরধ্বনি। সে দেশে এখন কত কাওই চলেছে, মারামারি হানাহানি, সব পার হয়ে আসছে একখানি সুর, তার মধ্যে একটুও ছায় পড়ে নি সেখানকার জীবনের। যেখানে এই গান গাওয়া হচ্ছে সেখানেও তো নানা রকম ব্যাপার চলেছে, নানারকম ঘটনাপ্রবাহ। কত লোক আসছে যাচ্ছে— যে গান গাইছে তারও একটা অস্তিত্ব আছে, কিন্তু সে সমস্তকে বাদ দিয়ে একটি সকল-সম্পর্করহিত নিরাসক্ত হরের ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে। মনে পড়ে যখন বোটে বসে লিখতুম, চারিদিকে জল বয়ে চলেছে মৃদু কলধ্বনিতে, দূরে দেখা যায় বালির চর ধু ধূ করছে, আমি লিখেই চলেছি লিখেই চলেছি "মানসী” ( মানসমুনার ) । যখন শুরু করেছিলাম তখন বা বা করে রোদুর, তার পরে ধীরে ধীরে স্নান হয়ে এল আলো, আকাশ রঙীন ক’রে অস্ত গেল সুর্য। একটি মাত্র চাকর বোটে থাকত আমার নীরব সঙ্গী, সে কখন নীরবে মিট্‌মিটে প্রদীপ রেখে চলে গেল। আমি লিখেই চলেছি— মানসী। আজ কোনো কাজ নয়, সব ফেলে দিয়ে ছন্দ-বন্ধ-গ্রন্থ-গীত এসে তুমি প্রিয়ে! কোথায় গেল সেই দিন। সেই পদ্মার চর, ধুধু করে সোনালী বালি, সেই মিট্‌মিটে শিখার স্নান আলো, সব চিহ্ন ধুয়ে মুছে গেছে, শুধু আছে মানসী, তার যে পরিবেশ ছিল সে তো লুপ্ত হয়ে গেল— এমন কি তার থেকে সম্পূর্ণ বাদ পড়ে গেছে তার কবিও। চারিদিকের সমস্ত স্বত্র তার ছিন্ন, সে শুধু একখানি স্বত্রছন্ন বাণী।. তোমার এই রেডিওর গান শুনছি আর এই সব ভাবছি।” সেই দিন একটা প্রকাও কবিতা লিখেছিলেন এ বিষয় নিয়ে। তারপর পরিবর্তন করতে করতে একটা কবিতা থেকে দুটো কবিতা হয়। তার একটি ‘সাড়ে নটা নামে নবজাতকে আর একটি মানসী" নামে সানাইতে প্রকাশিত হয়েছে। —মংপুতে রবীন্দ্রনাথ, পৃ ৯১-৯৩ "সার্থকতা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথকে প্রেরিত শ্ৰীমতী মৈত্রেয়ীদেবীর একটি কবিতার উত্তরে প্রথম লিখিত হইয়াছিল, 'মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ (পৃ ৬৩-৬৫ ) গ্রন্থে এইরূপ লেখা হইয়াছে। ‘রূপকথায় ১৩৪৬ সালে শান্তিনিকেতনে ‘ডাকঘর’ অভিনয়ের অসমাপ্ত এক আয়োজন উপলক্ষ্যে গান রূপে প্রথম রচিত হয়। নাটকটির তৃতীয় দৃশ্বে “ফকিরবেশী ঠাকুরদা"র ভূমিকায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের ইহা গাহিবার কথা ছিল।