পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ט\ט\ צ হারাধন । (কাদিয়া হাঁস বাহির করিয়া) সাহেব, এই নাও তোমার হাস । তোমার এ হাস কোনোমতেই আমার পেটে সাইল না । এর চেয়ে ডিমগুলো ছিল ভালো । হারাধনকে ধরিয়া সাহেবের প্রহার সাহেব, আর আবশ্যক নেই, আমার ব্যামো একেবারেই সেরে গেছে। জ্যৈষ্ঠ ১২৯২ চিন্তাশীল প্রথম দৃশ্য চিন্তাশীল নরহরি চিন্তায় নিমগ্ন। ভাত শুকাইতেছে। মা মাছি তাড়াইতেছেন মা ! অত ভেবো না, মাথার ব্যামো হবে বাছা ! নরহরি। আচ্ছ মা, "বাছা শব্দের ধাতু কী বলে দেখি । মা। কী জানি বাপু ! নরহরি। “বৎস । আজ তুমি বলছি "বাছা! — দু-হাজার বৎসর আগে বলত ‘বৎস" — এই কথাটা একবার ভালো করে ভেবে দেখো দেখি মা ! কথাটা বড়ো সামান্য নয়। এ কথা যতই ভাববে ততই ভাবনার শেষ হবে না। পুনরায় চিন্তায় মগ্ন মা | যে ভাবনা শেষ হয় না। এমন ভাবনার দরকার কী বাপ ! ভাবনা তো তোর চিরকাল থাকবে, ভাত যে শুকোয়। লক্ষ্মী আমার, একবার ওঠ । নরহরি । (চমকিয়া) কী বললে মা ? লক্ষ্মী ? কী আশ্চর্য! এক কালে লক্ষ্মী বলতে দেবী-বিশেষকে বোঝাত। পরে লক্ষ্মীর গুণ অনুসারে সুশীলা স্ত্রীলোককে লক্ষ্মী বলত, কালক্রমে দেখো পুরুষের প্রতিও লক্ষ্মী শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে! একবার ভেবে দেখো মা, আস্তে আস্তে ভাষার কেমন পরিবর্তন হয় ! ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে । মা। আমার আর কি কোনো ভাবনা নেই নরু ? আচ্ছা, তুই তো এত ভাবিস, তুইই বল দেখি উপস্থিত কাজ উপস্থিত ভাবনা ছেড়ে কি এই সব বাজে ভাবনা নিয়ে থাকা ভালো ? সকল ভাবনারই তো সময় আছে । নরহরি। এ কথাটা বড়ো গুরুতর মা ! আমি হঠাৎ এর উত্তর দিতে পারব না। এটা কিছুদিন ভাবতে হবে, ভেবে পরে বলব । মা। আমি যে কথাই বলি তোর ভাবনা তাতে কেবল বেড়েই ওঠে, কিছুতেই আর কমে না। কাজ নেই বাপু, আমি আর-কাউকে পাঠিয়ে দিই। [প্ৰস্থান মাসিম মাসিমা । ছিনরু, তুই কি পাগল হলি ? ছেড়া চাদর, একমুখ দাড়ি— সমুখে ভাত নিয়ে ভাবনা ! সুবলের মা তোকে দেখে হেসেই কুরুক্ষেত্ৰ ! নরহরি । কুরুক্ষেত্ৰ ! আমাদের আর্যগৌরবের শ্মশানক্ষেত্ৰ ! মনে পড়লে কি শরীর লোমাঞ্চিত হয়