পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVV রবীন্দ্র-রচনাবলী কিছুই করি না। “কারণ বাহির করিবার জন্য তুমি তঁহাকে পীড়াপীড়ি কর, এমন আমার ইচ্ছা নয়।” যোগেন্দ্ৰ ভাবিল, ইহাও অভিমানের কথা। কহিল, “আচ্ছা, সে তোমাকে কিছুই ভাবিতে হইবে ना।” दलिश, उशनई bलिशा शाश्ठ ७लाऊ श्ल। হেমনলিনী তখনই চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিল, “না দাদা, এ কথা লইয়া তুমি তাহার সঙ্গে আলোচনা করিতে যাইতে পরিবে না। তোমরা তঁহাকে যাহাই মনে কর-না কেন, আমি তাঁহাকে কিছুমাত্র সন্দেহ করি না।” তখন যোগেন্দ্রের হঠাৎ মনে হইল, এ তো অভিমানের মতো শুনাইতেছে না । তখন স্নেহমিশ্ৰিত করুণায় তাহার মনে মনে হাসি পাইল। ভাবিল, ইহাদের সংসারের জ্ঞােন কিছুই নাই ; এ দিকে পড়াশুনা এত করিয়াছে, পৃথিবীর খোঁজখবরও অনেক রাখে, কিন্তু কোনখানে সন্দেহ করিতে হইবে সে অভিজ্ঞতাটুকুও ইহার হয় নাই। এই নিঃসংশয় নির্ভরের সহিত রমেশের ছদ্মব্যবহারের তুলনা করিয়া যোগেন্দ্ৰ মনে মনে রমেশের উপর আরো চটিয়া উঠিল । ‘কারণ বাহির করিবার প্রতিজ্ঞা তাহার মনে আরো দৃঢ় হইল । যোগেন্দ্ৰ দ্বিতীয় বার চলিয়া যাইবার উপক্ৰম করিলে হেমনলিনী কাছে গিয়া তাহার হাত ধরিয়া কহিল, "দাদা, তুমি প্রতিজ্ঞা করো যে, তাহার কাছে এ-সব কথা একেবারে উত্থাপনমাত্র করিবে না ।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “সে দেখা যাইবে ।” হেমনলিনী । না দাদা, দেখা যাইবে না । আমার কাছে কথা দিয়া যাও । আমি তোমাদের নিশ্চয় বলিতেছি তোমাদের কোনো চিন্তার বিষয় নাই | একটিবার আমার এই একটি কথা রাখে !" হেমনলিনীর এইরূপ দৃঢ়তা দেখিয়া যোগেন্দ্ৰ ভাবিল। তবে নিশ্চয় রমেশ হেমের কাছে সকল কথা বলিয়াছে, কিন্তু হেমকে যাহা-তােহা বলিয়া ভুলানো তো শক্ত নয়। কহিল, “দেখো হেম, অবিশ্বাসের কথা হইতেছে না । কন্যাপক্ষের অভিভাবকদের যাহা কর্তব্য তাহা করিতে হইবে তো ! তোমার সঙ্গে তার যদি কিছু বোঝাপড়া হইয়া থাকে। সে তোমরাই জােন, কিন্তু সেই হইলেই তো যথেষ্ট হইল না— আমাদের সঙ্গেও তাহার বোঝাপড়া করিবার আছে। সত্য কথা বলিতে কি হেম, এখন তোমার চেয়ে আমাদেরই সঙ্গে তাহার বোঝাপড়ার সম্পর্ক বেশি।— বিবাহ হইয়া গেলে তখন আমাদের বেশি কথা বলিবার থাকিবে না ।” এই বলিয়া যোগেন্দ্র তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল। ভালোবাসা যে আড়াল, যে আবরণ খোজে, সে আর রহিল না। হেমনলিনী ও রমেশের যে সম্বন্ধ ক্ৰমে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ হইয়া দুই জনকে কেবল দুই জনেরই করিয়া দিবে, আজ তাহারই উপরে দশ জনের সন্দেহের কঠিন স্পর্শ আসিয়া বারংবার আঘাত করিতেছে। চারিদিকের এই-সকল আন্দোলনের অভিঘাতে হেমনলিনী এমনি ব্যথিত হইয়া আছে যে, আত্মীয়বন্ধুদের সহিত সাক্ষাংমাত্রও তাঁহাকে কুষ্ঠিত করিয়া তুলিতেছে। যোগেন্দ্ৰ চলিয়া গেলে হেমনলিনী চৌকিতে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। যোগেন্দ্ৰ বাহিরে যাইতেই অক্ষয় আসিয়া কহিল, “এই-যে, যোগেন আসিয়াছ। সব কথা শুনিয়াছ তো ? এখন তোমার কী মনে হইতেছে ?” যোগেন্দ্র । মনে তো অনেক রকম হইতেছে, সে-সমস্ত অনুমান লইয়া মিথ্যা বাদানুবাদ করিয়া কী হইবে ? এখন কি চায়ের টেবিলে বসিয়া মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্ম আলোচনার সময় ? অক্ষয় | তুমি তো জােনই সূক্ষ্ম আলোচনাটা আমার স্বভাব নয়, তা মনস্তত্ত্বই বলো, দর্শনই বলে, আর কাবাই বলে । আমি কাজের কথাই বুঝি ভালো— তোমার সঙ্গে সেই কথাই বলিতে আসিয়াছি। ! অধীৱস্বভাব যোগেন্দ্ৰ কহিল, “আচ্ছা, কাজের কথা হবে । এখন বলিতে পারে। রমেশ কোথায়?” গেছে ?” অক্ষয় কহিল, “পারি।” যোগেন্দ্র প্রশ্ন করিল, “কোথায় ?” অক্ষয় কহিল, “এখন সে আমি তোমাকে বলিব না— আজ তিনটার সময় একেবারে তোমাকে