পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRG NR রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি কি কচি খুঁকি ? মামার বাড়িতে আমি তো বরাবর রাধিয়া আসিয়াছি।” রমেশ তৎক্ষণাৎ অনুতাপ প্রকাশ করিয়া কহিল, “তই তো, তোমাকে এই প্রশ্নটা করা ঠিক সংগীত হয় নাই। তাহা হইলে এখন হইতে রাধিবার জোগাড় করা যােক- কী বল ?” এই বলিয়া রমেশ চলিয়া গেল এবং সন্ধান করিয়া এক লোহার উনুন সংগ্ৰহ করিল। শুধু তাই নয়, কাশী পৌছাইয়া দিবার খরচ ও বেতনের প্রলোভনে উমেশ বলিয়া এক কায়স্থবালককে জল-তোলা বাসন-মাজা প্রভৃতি কাজের জন্য নিযুক্ত করিল। রমেশ কহিল, “কমলা, আজ কী রান্না হইবে ?” কমলা কহিল, “তোমার তো ভারি জোগাড় আছে! এক ডাল আর চাল-আজ খিচুড়ি হইবে।” রমেশ খালাসিদের নিকট হইতে কমলার নির্দেশমত মসলা সংগ্ৰহ করিয়া আনিল । রমেশের অনভিজ্ঞতায় কমলা হাসিয়া উঠিল ; কহিল, “শুধু মসলা লইয়া কী করিব ? শিল-নোেড় নহিলে বাটিব কী করিয়া ? তুমি তো বেশ !” বালিকার এই অবজ্ঞা বহন করিয়া রমেশ শিল-নোড়ার সন্ধানে ছুটিল। শিল-নোড়া না পাইয়া খালাসিদের কােছ হইতে এক লোহার হামানদিস্তা ধার করিয়া আনিল । হামানদিস্তায় মসলা কোটা কমলার অভ্যাস ছিল না । অগত্যা তাহাই লইয়া বসিতে হইল । রমেশ কহিল, “মসলা নাহয় আর কাহাকেও দিয়া পিষাইয়া আনিতেছি।” কমলার তাহা মনঃপূত হইল না। সে নিজেই উৎসাহসহকারে কাজ আরম্ভ করিল। এই অনভ্যস্ত প্ৰণালীর অসুবিধাতে তাহার কৌতুকবােধ হইল। মসলা লাফাইয়া উঠিয়া চারিদিকে ছিটকাইয়া পড়ে, আর সে হাসি রাখিতে পারে না । তাহার এই হাসি দেখিয়া রমেশেরও হাসি পায় । এইরূপে মসলা কোটার অধ্যায় শেষ করিয়া কোমরে আঁচল জড়াইয়া একটা দরমাঘেরা জায়গায় কমলা রান্না চড়াইয়া দিল । কলিকাতা হইতে একটা হাঁড়িতে করিয়া সন্দেশ আনা হইয়াছিল, সেই হাড়িতেই কাজ চালাইয়া লইতে হইল । রান্না চড়াইয়া দিয়া কমলা রমেশকে কহিল, “তুমি যাও, শীঘ্ৰ স্নান করিয়া লও, আমার রান্না হইতে বেশি দেরি হইবে না ।” রান্নাও হইল, রমেশও স্নান করিয়া আসিল । এখন প্রশ্ন উঠিল, থাল তো নাই, কিসে খাওয়া যায় ? রমেশ অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে কহিল, ”খালাসিদের কােছ হইতে সানবিক ধার করিয়া আনা যাইতে পারে ।” কমলা কহিল, “ছি !" রমেশ মৃদুস্বরে জানাইল, এরূপ অনাচার পূর্বেও তাহার দ্বারা অনুষ্ঠিত হইয়াছে। কমলা কহিল, “পূর্বে যা হইয়াছে তা হইয়াছে, এখন হইতে হইবে না- আমি ও দেখিতে পারিব NY " এই বলিয়া সে নিজেই সন্দেশের মুখে যে সরা ছিল, তাহাই ভালো করিয়া ধুইয়া আনিয়া উপস্থিত করিল। কহিল, “আজকের মতো তুমি ইহাতেই খাও, পরে দেখা যাইবে।” জল দিয়া ধুইয়া আহারস্থান প্রস্তুত হইলে রমেশ শুদ্ধভাবে খাইতে বসিয়া গেল। দুই-এক গ্ৰাস মুখে তুলিয়া কহিল, “বাঃ, চমৎকার হইয়াছে।” BB DDBBD DB DBDDDSDDDSD BDBBBDBD BBB DDSS রমেশ কহিল, “ঠাট্টা নয় তাহা এখনই দেখিতে পাইবে।” বলিয়া পাতের অন্ন দেখিতে দেখিতে নিঃশেষ করিয়া আবার চাহিল । কমলা এবারে অনেক বেশি করিয়া দিল । রমেশ ব্যস্ত হইয়া কহিল, “ও কী করিতেছ ? তোমার নিজের জন্য কিছু আছে তো ?” “ ঢের আছে- সেজন্যে তোমার ভাবিতে হইবে না ।” রমেশের তৃপ্তিপূর্বক আহারে কমলা ভারি খুশি হইল। রমেশ কহিল, “তুমি কিসে খাইবে ?” কমলা কহিল, “কেন, ঐ সরাতেই হইবে।”