পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 8 মধ্যাহত বেলা দ্বিপ্রহর । ক্ষুদ্র শীর্ণ নদীখানি শৈবালে জর্জর স্থির স্রোতোহীন । অর্ধমগ্ন তরী-’পরে মাছরাঙা বসি, তীরে দুটি গোরু চারে শস্যহীন মাঠে ৷ শাস্তনেত্ৰে মুখ তুলে মহিষ রয়েছে জলে ডুবি । নদীকূলে জনহীন নৌকা বাধা । শূন্য ঘাটতলে রৌদ্রতপ্ত দাড়কাক স্নান করে জলে পাখা কািটপটি । শ্যামশাস্পতাটে তীরে খঞ্জন দুলায়ে পুচ্ছ নৃত্য করি ফিরে । চিত্ৰবৰ্ণ পতঙ্গম স্বচ্ছ পক্ষতরে ক্ষণে ক্ষণে লভিয়া বিশ্রাম । রাজহাস শুভ্ৰ পক্ষ ধৌত করে সিক্ত চঞ্চপুটে । শুষ্কতৃণগন্ধ বহি ধেয়ে আসে ছুটে y G Čba > Oio R তপ্ত সমীরণ— চলে যায় বহু দূর । থেকে থেকে ডেকে ওঠে। গ্রামের কুকুর কলহে মাতিয়া । কভু শান্ত হাম্বাস্বর, কন্তু শালিকের ডাক, কখনো মর্মর জীর্ণ অশাথের, কভু দূর শূন্য-’পরে আর্ত শব্দ বাধা তরণীর- মধ্যাহ্নের অব্যক্ত করুণ একতান, অরণ্যের স্নিগ্ধচ্ছায়া, গ্রামের সুষুপ্ত শাস্তিরাশি, মাঝখানে বসে আছি। আমি পরবাসী । প্রবাসবিরহাদুঃখ মনে নাহি বাজে ; আমি মিলে গেছি যেন সকলের মাঝে ; ফিরিয়া এসেছি যেন আদি জন্মস্থলে বহুকাল পরে- ধরণীর বক্ষতলে পশু পাখি পতঙ্গম সকলের সাথে ফিরে গেছি যেন কোন নবীন প্ৰভাতে পূর্বজন্মে, জীবনের প্রথম উল্লাসে আঁকড়িয়া ছিনু যাবে আকাশে বাতাসে জলে স্থলে, মাতৃস্তনে শিশুর মতন— আদিম আনন্দরস করিয়া শোষণ ।