পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি S¢ዓ রমেশ কহিল, “হা, সে অনেক কাল আগে । তখন তোমার জন্ম হয় নাই ।” কমলা । তোমারই নাকি জন্ম হইয়াছিল ! তুমি নাকি বহুকালের লোক !- তার পরে ? রমেশ । সেই ক্ষত্রিয়দের নিয়ম ছিল, তাহারা নিজে বিবাহ করিতে না গিয়া তলোয়ার পাঠাইয়া দত । সেই তলোয়ারের সহিত বধূর বিবাহ হইয়া গেলে তাহাকে বাড়িতে আনিয়া আবার বিবাহ কবিতা ৷ কমলা । না না, ছিঃ ! ও কী রকম বিবাহ ! রমেশ । আমিও ও রকম বিবাহ পছন্দ করি না, কিন্তু কী করিব, যে ক্ষত্রিয়দের কথা বলিতেছি তাহারা শ্বশুরবাড়ি নিজে গিয়া বিবাহ করিতে অপমান বোধ করিত । আমি যে রাজার গল্প বলিতেছি। সে ঐ জাতের ক্ষত্রিয় ছিল । একদিন সে কমলা । তুমি তো বলিলে না, সে কোথাকার রাজা ? রমেশ বলিয়া দিল, “মন্দ্রদেশের রাজা । একদিন সেই রাজা-” কমলা ! রাজার নাম কী আগে বলে । কমলা সকল কথা স্পষ্ট করিয়া লইতে চায়, তাহার কাছে কিছুই উহ্য রাখিলে চলিবে না। রমেশ এতটা জানিলে আগে হইতে আরো বেশি প্রস্তুত হইয়া থাকিত ; এখন দেখিল, কমলার গল্প শুনিতে যতই আগ্রহ থােক, গল্পের কোনো জায়গায় তাহার ফাকি সহ্য হয় না। রমেশ হঠাৎ প্রশ্নে একটু থমকিয়া বলিল, “রাজার নাম রণজিৎ সিং ।” কমলা একবার আবৃত্তি করিয়া লইল, “রণজিৎ সিং, মদ্রদেশের রাজা । তার পরে ?" রমেশ । তার পরে একদিন রাজা ভাটের মুখে শুনিলেন, তাহারই জাতের আর এক রাজার এক পরমাসুন্দরী কন্যা আছে । কমলা ! সে আবার কোথাকার রাজা ? রমেশ । মনে করো, সে কাঞ্চর রাজা । কমলা | মনে করিব কী ! তবে সত্য কি সে কাঞ্চার রাজা নয় ? রমেশ । কাঞ্চীরই রাজা বটে । তুমি তার নাম জানিতে চাও ? তার নাম অমর সিং । কমলা । সেই মেয়ের নাম তো বলিলে না ?— সেই পরমাসুন্দরী কন্যা ! রমেশ । ই ই, ভুল হইয়াছে বটে। সেই মেয়ের নাম— তাহার নাম- ওঃ, তাহার নাম চন্দ্ৰাকমলা | আশ্চর্য! তুমি এমন ভুলিয়া যাও ! তুমি তো আমারই নাম ভুলিয়ছিলে । রমেশ | কৌশলের রাজা ভাটের মুখে এই কথা শুনিয়াকমলা । কৌশলের রাজা কোথা হইতে আসিল ? তুমি যে বলিলে মাদ্রদেশের রাজারমেশ | সে কি এক জায়গার রাজা ছিল মনে করা ? সে কৌশলেরও রাজা, মদ্রেরও রাজা । কমলা। দুই রাজ্য বুঝি পাশাপাশি ? রমেশ । একেবারে গায়ে গায়ে লােগাও । এইরূপে বারংবার ভুল করিতে করিতে ও সতর্ক কমলার প্রশ্নের সাহায্যে সেই সকল ভুল কোনোমতে সংশোধন করিতে করিতে রমেশ এইরূপ ভাবে গল্পটি বলিয়া গেল মদ্ররাজ রণজিৎ সিং কাঞ্চীরাজের নিকট রাজকন্যাকে বিবাহ করিবার প্রস্তাব জানাইয়া দূত পঠাইয়া দিলেন। কান্ধীর রাজা অমর সিং খুশি হইয়া সম্মত হইলেন । তখন রণজিৎ সিংহের ছোটাে ভাই ইন্দ্ৰজিৎ সিং সৈন্যসামন্ত লইয়া নিশান উড়াইয়া কাড়া-নাকাড়া দুন্দুভি-দামামা বাজাইয়া কাঞ্চার রাজোদানে গিয়া ঠাবু ফেলিলেন । কাঞ্চীনগরে উৎসবের সমারোহ পড়িয়া গেল । রাজার দৈবজ্ঞ গণনা করিয়া শুভ দিনক্ষণ স্থির করিয়া দিল । কৃষ্ণা দ্বাদশীীতিথিতে রাত্রি আড়াই প্রহরের পর লগ্ন। রাত্রে নগরের ঘরে ঘরে ফুলের মালা দুলিল এবং দীপাবলী জ্বলিয়া উঠিল । আজ রাত্রে রাজকুমারী চন্দ্রার বিবাহ ।