পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rbrbr - রবীন্দ্র-রচনাবলী তিনি সেখানে কাজে গেছেন, দুদিন বাদেই আসিবেন, ইহার মধ্যে যদি সময় করিয়া উঠিতে না পারেন তাই বলিয়া কি অত রাগ করিতে আছে। ছি! তাও বলি ভাই, তোমাকে আজ এত উপদেশ দিতেছি। আমি হইলেও ঠিক ঐ কাণ্ডটি করিয়া বসিতাম। এমন মিছিমিছ কান্না মেয়েমানুষকে অনেক কঁদিতে হয়। আবার এই কান্না ঘুচিয়া গিয়া যখন হাসি ফুটিয়া উঠিবে তখন কিছুই মনে থাকিবে না।” এই বলিয়া কমলাকে বুকের কাছে টানিয়া লইয়া শৈল কহিল, “আজ তুমি মনে করিতেছ, রমেশবাবুকে আর কখনো তুমি মাপ করিবে না— তাই না ? আচ্ছ, সত্যি বলে ।” শৈল কমলার গালে করতলের আঘাত করিয়া কহিল, “ইস ! তাই বৈকি ! দেখা যাইবে । আচ্ছা, বাজি রাখো ।” - কমলার সঙ্গে কথাবার্তা হইবার পরেই শৈল এলাহাবাদে তাহার বােপকে চিঠি পাঠাইল । তাহাতে লিখিল, “কমলা রমেশবাবুর কোনাে চিঠিপত্র না পাইয়া অত্যন্ত চিন্তিত আছে। একে বেচারা নূতন বিদেশে আসিয়াছে, তাহার পরে রমেশবাবু যখন-তখন তাহাকে ফেলিয়া চলিয়া যাইতেছেন এবং চিঠিপত্র লিখিতেছেন না, ইহাতে তাহার কী কষ্ট হইতেছে একবার ভাবিয়া দেখো দেখি । তাহার এলাহাবাদের কাজ কি আর শেষ হইবে না নাকি ? কাজ তো ঢ়ের লোকের থাকে, কিন্তু তাই বলিয়া দুই ছত্র চিঠি লিখিবার কি অবসর পাওয়া যায় না ?” খুড়া রমেশের সঙ্গে দেখা করিয়া তাহার কন্যার পত্রের অংশবিশেষ শুনাইয়া ভৎসনা করিলেন। কমলার দিকে রমেশের মন যথেষ্ট পরিমাণে আকৃষ্ট হইয়াছে। এ কথা সত্য, কিন্তু আকৃষ্ট হইয়াছে বলিয়াই তাহার দ্বিধা আরো বাড়িয়া উঠিল । এই দ্বিধার মধ্যে পড়িয়া রমেশ কোনোমতেই এলাহাবাদ হইতে ফিরিতে পারিতেছিল না । ইতিমধ্যে খুড়ার কােছ হইতে শৈলর চিঠি শুনিল । চিঠি হইতে বেশ বুঝিতে পারিল, কমলা রমেশের জন্য বিশেষ উদবেগ প্রকাশ করিতেছে- সে কেবল নিজে লজ্জায় লিখিতে পারে নাই। ইহাতে রমেশের দ্বিধার দুই শাখা দেখিতে দেখিতে একটাতে আসিয়া মিলিয়া গেল। এখন তো কেবলমাত্র রমেশের সুখদুঃখ লইয়া কথা নয়, কমলাও যে রমেশকে ভালোবাসিয়াছে। বিধাতা যে প্রশ্ন কের চরের উপর তাদের দৃষ্ট ক্রকে দিলীয়া কেরছেন তাঙ্ক নয়, ফলে মধ্যেও এর KI YA এই ভাবিয়া রমেশ আর বিলম্বমাত্র না করিয়া কমলাকে এক চিঠি লিখিয়া বসিল । লিখিল প্রিয়তমাসু কমলা, তোমাকে এই-যে সম্ভাষণ করিলাম, ইহাকে চিঠি লিখিবার একটা প্রচলিত পদ্ধতিপালন বলিয়া গণ্য করিয়ো না। যদি তোমাকে আজ পৃথিবীতে সকলের চেয়ে প্রিয় বলিয়া না জানিতাম তবে কখনোই আজ ‘প্ৰিয়তমা বলিয়া সম্ভাষণ করিতে পারিতাম না। যদি তোমার মনে কখনো কোনো সন্দেহ হইয়া থাকে, যদি তোমার কোমল হৃদয়ে কখনো কোনো আঘাত করিয়া থাকি, তবে এই যে আজ সত্য করিয়া তোমাকে ডাকিলাম ‘প্ৰিয়তমা ইহাতেই আজ তোমার সমস্ত সংশয়, সমস্ত বেদনা নিঃশেষে ক্ষালন করিয়া দিক । ইহার চেয়ে তোমার্কে আর বেশি বিস্তারিত করিয়া কী বলিব ? এ পর্যন্ত আমার অনেক আচরণ তোমার কাছে নিশ্চয় ব্যাথাজনক হইয়াছে- সেজন্য যদি তুমি মনে মনে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়া থাক তবে আমি প্রতিবাদী হইয়া তাহার লেশমাত্র প্রতিবাদ করিব না— আমি কেবল বলিব, আজ তুমি আমার প্ৰিয়তমা, তোমার চেয়ে প্ৰিয় আমার আর কেহই নাই। ইহাতেও যদি আমার সমস্ত অপরাধের, সমস্ত অসংগত আচরণের শেষ জবাব না হয়, তবে আর কিছুতেই হইবে না। অতএব, কমলা, আজ তোমাকে এই ‘প্ৰিয়তমা’ সম্বোধন করিয়া আমাদের সংশয়াচ্ছন্ন