পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি Հեծ অতীতকে দূরে সরাইয়া দিলাম, এই ‘প্রিয়তমা সম্বোধন করিয়া আমাদের ভালোবাসার ভবিষ্যৎকে আরম্ভ করিলাম। তোমার কাছে আমার একান্ত মিনতি, তুমি আজ আমার ‘প্রিয়তমা এই কথাটি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে। ইহা যদি ঠিক তুমি মনে গ্ৰহণ করিতে পার তবে কোনো সংশয় লইয়া আমাকে আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার প্রয়োজন থাকিবে না । তাহার পরে, আমি তোমার ভালোবাসা পাইয়াছি কি না, সে কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করিতে আমার সাহস হয় না। আমি জিজ্ঞাসা করিবও না। আমার এই অনুচ্চারিত প্রশ্নের অনুকুল উত্তর একদিন তোমার হৃদয়ের ভিতর দিয়া আমার হৃদয়ের মধ্যে নিঃশব্দে আসিয়া পৌঁছিবে, ইহাতে আমি সন্দেহমাত্র করি না । ইহা আমি আমার ভালোবাসার জোরে বলিতেছি । আমার যোগ্যতা লইয়া অহংকার করি না, কিন্তু আমার সাধনা কেন সার্থক হইবে না ? আমি বেশ বুঝিতেছি, আমি যাহা লিখিতেছি তাহা কেমন সহজ হইতেছে না, তাহ রচনার মতো শুনাইতেছে। ইচ্ছা করিতেছে, এ চিঠি ছিড়িয়া ফেলি। কিন্তু যে চিঠি মনের মতো হইবে সে চিঠি এখনি লেখা সম্ভব হইবে না। কেননা, চিঠি দুজনের জিনিস, কেবল এক পক্ষ যখন চিঠি লেখে তখন সে চিঠিতে সব কথা ঠিক করিয়া লেখা চলে না ; তোমাতে আমাতে যেদিন মন-জানাজানির বাকি থাকিবে না সেইদিনই চিঠির মতো চিঠি লিখিতে পারিব । সামনা-সামনি দুই দরজা খোলা থাকিলে তখনি ঘরে অবাধে হাওয়া খেলে। কমলা, প্রিয়তমা, তোমার হৃদয় কবে সম্পূর্ণ উদঘাটন করিতে পারিব ? এ-সব কথার মীমাংসা ধীরে ধীরে ক্রমে ক্রমে হইবে ; ব্যস্ত হইয়া ফল নাই। যেদিন আমার চিঠি পাইবে তাহার পরের দিন সকালবেলাতেই আমি গাজিপুরে পৌঁছব | তোমার কাছে আমার অনুরোধ এই গাজিপুরে পীেছিয়া আমাদের বাসাতেই যেন তোমাকে দেখিতে পাই। অনেক দিন গৃহহারার মতো কাটিল- আর আমার ধৈর্য নাই— এবারে গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিব, হৃদয়লক্ষ্মীকে গৃহলক্ষ্মীর মূর্তিতে দেখিব। সেই মুহুর্তে দ্বিতীয়বার আমাদের শুভদৃষ্টি হইবে। মনে আছে- আমাদের প্রথমবার সেই শুভদৃষ্টি ? সেই জ্যোৎস্নারাত্রে, সেই নদীর ধারে, জনশূন্য বালুমরুর মধ্যে ? সেখানে ছাদ ছিল না, প্রাচীর ছিল না, পিতামাতাম্রাতা-আত্মীয়প্রতিবেশীর সম্বন্ধ ছিল না— সে যে গৃহের একেবারে বাহির । সে যেন স্বপ্ন, সে যেন কিছুই সত্য নহে। সেইজন্য আর-একদিন স্নিগ্ধনির্মল প্ৰাতঃকালের আলোকে, গৃহের মধ্যে, সত্যের মধ্যে, সেই শুভদৃষ্টিকে সম্পূর্ণ করিয়া লইবার অপেক্ষা আছে। পুণ্যপৌষের প্রাতঃকালে আমাদের গৃহদ্বারে তোমার সরল সহাস্য মূৰ্তিখনি চিরজীবনের মতো আমার হৃদয়ের মধ্যে অঙ্কিত করিয়া লইব, এইজন্য আমি আগ্রহে পরিপূর্ণ হইয়া আছি। প্রিয়তমে, আমি তোমার হৃদয়ের দ্বারে অতিথি, আমাকে ফিরাইয়ো না- প্রসাদভিক্ষু রমেশ । ᏔᏬᏄ শৈল স্নান কমলাকে একটুখানি উৎসাহিত করিয়া তুলিবার জন্য কহিল, “আজ তোমাদের বাংলায় यशैव ना ?” কমলা কহিল, “না, আর দরকার নাই।” শৈল | তোমার ঘর-সাজানো শেষ হইয়া গেল ? কমলা । ই ভাই, শেষ হইয়া গেছে। কিছুক্ষণ পরে আবার শৈল আসিয়া কহিল, “একটা জিনিস। যদি দিই তো কী দিবি বল ?” কমলা কহিল, “আমার কী আছে দিদি ?” । শৈল। একেবারে কিছুই নাই ? কমলা। কিছুই না।