পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডবি RS6 ga উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল। তিনি ভাবিলেন, হেমের মন আজ একটুখানি সুস্থ হইয়াছে, অক্ষয়কে দেখিলেই আবার বিকল হইয়া উঠিবে— কিন্তু এখন আর কোনো উপায় নাই। মুহুর্ত পরেই হেমনলিনী ঘরে প্রবেশ করিল। অক্ষয় তাহাকে দেখিয়াই উঠিয়া পড়িল, কহিল, “ যোগেন, আমি আজ তবে আসি।” হেমনলিনী কহিল, “কোন অক্ষয়বাবু, আপনার কি কোনো কাজ আছে ? এক পেয়ালা চা খাইয়া शान् |" হেমনলিনীর এই অভ্যর্থনায় ঘরের সকলেই আশ্চর্য হইয়া গেল। অক্ষয় পুনর্বাের আসন গ্ৰহণ করিয়া কহিল, “আপনাদের অবর্তমানেই আমি দু পেয়ালা চা খাইয়াছি— পীড়াপীড়ি করিলে আরো দু পেয়ালা যে চলে না। তাহা বলিতে পারি না ।” হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, “চায়ের পেয়ালা লইয়া আপনাকে কোনোদিন তো পীড়াপীড়ি করিতে হয় নাই ।” অক্ষয় কহিল, “না, ভালো জিনিসকে আমি কখনো প্রয়োজন নাই বলিয়া ফিরিতে দিই না, বিধাতা আমাকে ঐটুকু বুদ্ধি দিয়াছেন।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “সেই কথা স্মরণ করিয়া ভালো জিনিসও যেন তোমাকে কোনোদিন প্রয়োজন নাই বলিয়া ফিরাইয়া না দেয়, আমি তোমাকে এই আশীর্বাদ করি ।” অনেক দিন পরে অন্নদার চায়ের টেবিলে কথাবার্তা বেশ সহজভাবে জমিয়া উঠিল। সচরাচর হেমনলিনী শান্তভাবে হাসিয়া থাকে, আজ তাহার হাসির ধ্বনি মাঝে মাঝে কথোপকথনের উপরে ফুটিয়া উঠিতে লাগিল। অন্নদাবাবুকে সে ঠাট্টা করিয়া কহিল, “বাবা, অক্ষয়বাবুর অন্যায় দেখে, কয়দিন তোমার পিল না খাইয়াও উনি দিব্যি ভালো আছেন । যদি কিছুমাত্র কৃতজ্ঞতা থাকিত তবে অন্তত মাথাও ধরিত ৷” যোগেন্দ্ৰ । ইহাকেই বলে পিল-হারামি । অন্নদাবাবু অত্যন্ত খুশি হইয়া হাসিতে লাগিলেন। অনেক দিন পরে আবার যে র্তাহার পিল-বাক্সের উপরে আত্মীয়স্বজনের কটাক্ষপাত আরম্ভ হইয়াছে, ইহা তিনি পারিবারিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ বলিয়া গণ্য করিলেন ; তাহার মন হইতে একটা ভার নামিয়া গেল। { তিনি কহিলেন, “এই বুঝি ! লোকের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ ! আমার পিলাহারী দলের মধ্যে ঐ একটিমাত্র অক্ষয় আছে, তাহাকেও ভাঙাইয়া লইবার চেষ্টা ।” অক্ষয় কহিল, “সে ভয় করিবেন না। অন্নদাবাবু। অক্ষয়কে ভাঙাইয়া লওয়া শক্ত ।” যোগেন্দ্র। মেকি টাকার মতো, ভাঙাইতে গেলে পুলিস-কেস হইবার সম্ভাবনা । এইরূপে হাস্যলাপে অন্নদাবাবুর চায়ের টেবিলের উপর হইতে যেন অনেক দিনের এক ভূত ছাড়িয়া গেল । আজিকার এই চায়ের সভা। শীঘ্ৰ ভাঙিত না। কিন্তু আজ যথাসময়ে হেমনলিনীর চুল বাধা হয় নাই প্রত্নস্থলে উঠিয়া হইতে ইল-তঞ্চ অক্ষত্রেও একটা বিশেষকাজের কথা নেপাল, সেও য়া গেল । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, আর বিলম্ব নয়, এইবেলা হেমের বিবাহের জোগাড় করো ।” অন্নদাবাবু অবাক হইয়া চাহিয়া রহিলেন। যোগেন্দ্ৰ কহিল, “রমেশের সহিত বিবাহ ভাঙিয়া যাওয়া ঝগড়া করিয়া বেড়াইব ? সকল কথা যদি খোলসা করিয়া বলিবার জো থাকিত তাহা হইলে ঝগড়া করিতে আপত্তি করিতাম না। কিন্তু হেমের জন্য মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারি না, কাজেই হাতাহাতি করিতে হয়। সেদিন অখিলকে চাবকাইয়া আসিতে হইয়াছিল- শুনিলাম, সে লোকটা যাহা মুখে আসে তাঁহাই বলিয়াছিল। শীঘ্ৰ যদি হেমের বিবাহ হইয়া যায় তাহা হইলে সমস্ত কথা চুকিয়া যায় এবং আমাকেও পৃথিবী-সুদ্ধ লোককে দিনরাত্ৰি আস্তিন তুলিয়া শাসাইয়া বেড়াইতে হয় না। আমার কথা