পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नीकाफूदि Ridd কহিলেন, “ই বলিয়াছি।” তাহার ভয় ছিল, পাছে যোগেন্দ্র নিজে গিয়া হেমনলিনীকে ব্যথিত করিয়া @阿1 - যোগেন্দ্ৰ কহিল, “সে অবশ্য রাজি হইয়াছে ?” অন্নদা । হা, একরকম রাজি বৈকি । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “তবে আমি অক্ষয়কে বলিয়া আসি গে ?” অন্নদা ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “না না, অক্ষয়কে এখন কিছু বলিয়ে না। বুঝিয়াছ যোগেন, অত বেশি তাড়াতাড়ি করিতে গেলে সমস্ত ফাসিয়া যাইবে। এখন কাহাকেও কিছু বলিবার দরকার নাই ; আমরা বরঞ্চ একবার পশ্চিমে বেড়াইয়া আসি গে, তার পরে সমস্ত ঠিক হইবে।” যোগেন্দ্র সে কথার কোনো উত্তর না করিয়া চলিয়া গেল । কঁধে একখানা চাদর ফেলিয়া একেবারে অক্ষয়ের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল। অক্ষয় তখন একখানি ইংরাজি মহাজনী হিসাবের বই লইয়া বুক-কীপিং শিখিতেছিল। যোগেন্দ্র তাহার খাতপত্র টান দিয়া ফেলিয়া কহিল, “ও-সব পরে হইবে, এখন তোমার বিবাহের দিন ঠিক করো।” । অক্ষয় কহিল, “বল কী ?” VS পরদিন হেমনলিনী প্রত্যুষে উঠিয়া যখন প্রস্তুত হইয়া বাহির হইল তখন দেখিল, অন্নদাবাবুর্তাহার শোবার থরের জানালার কাছে একটা ক্যামবিসের কেদারা টানিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছেন। ঘরে আসবাব অধিক নাই একটি খািট আছে, এক কোণে একটি আলমারি, একটি দেয়ালে অন্নদাবাবুর পরলোকগত স্ত্রীর একটি ছায়াপ্রায় বিলীয়মান বাধানো ফোটােগ্রাফ- এবং তাঁহারই সম্মুখের দেয়ালে সেই তাহার পত্নীর স্বহস্তেরচিত একখণ্ড পশমের কারুকার্য। স্ত্রীর জীবদ্দশায় আলমারিতে যে-সমস্ত টুকিটাকি শৌখিন জিনিস যেমনভাবে সজ্জিত ছিল আজও তাহারা তেমনি রহিয়াছে। পিতার পশ্চাতে দাড়াইয়া পাকা চুল তুলিবার ছলে মাথায় কোমল অঙ্গুলিগুলি চালনা করিয়া হেম বলিল, “বাবা, চলে আজ সকাল-সকাল চা খাইয়া লইবে । তার পরে তোমার ঘরে বসিয়া তোমার সেকালের গল্প শুনিব- সে-সব কথা আমার কত ভালো লাগে বলিতে পারি না ।” • হেমনলিনী সম্বন্ধে অন্নদাবাবুর বোধশক্তি আজকাল এমনি প্রখর হইয়া উঠিয়াছে যে, এইচ খাইতে তাড়া দিবার কারণ বুঝিতে র্তাহার কিছুমাত্র বিলম্ব হইল না। আর কিছু পরেই অক্ষয় চায়ের টেবিলে আসিয়া উপস্থিত হইবে ; তাহারই সঙ্গ এড়াইবার জন্য তাড়াতাড়িচা খাওয়া সারিয়া লইয়া হেম পিতার কক্ষে নিভৃতে আশ্রয় লইতে ইচ্ছা করিয়াছে, ইহা তিনি মুহুর্তেই বুঝিতে পারিলেন। ব্যাধভয়ে ভীত হরিণীর মতো তাহার কন্যা যে সর্বদা ত্ৰস্ত হইয়া আছে, ইহা তঁহার মনে অত্যন্ত বাজিল । নীচে গিয়া দেখিলেন, চাকর এখনো চায়ের জল তৈরি করে নাই। র্তাহার উপরে হঠাৎ অত্যন্ত রাগিয়া উঠিলেন ; সে বৃথা বুঝাইবার চেষ্টা করিল যে, আজ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই চায়ের তলব ইয়াছে। চাকররা সব বাবু হইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের ঘুম ভাঙাইবার জন্য আবার অন্য লোক রাখার দরকার হইয়াছে, এইরূপ মত তিনি অত্যন্ত নিঃসংশয়ে প্রচার করিলেন । চাকর তো তাড়াতাড়ি চায়ের জল আনিয়া উপস্থিত করিল। অন্নদাবাবু অন্যদিন যেরূপ গল্প করিতে করিতে ধীরে-সুস্থে আরামে চা-রস উপভোগ করিতেন। আজ তাহা না করিয়া অনাবশ্যক সত্বরতার সহিত পেয়ালা নিঃশেষ করিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন। হেমনলিনী কিছু আশ্চর্য হইয়া বলিল, "বাবা, আজ কি তোমার কোথাও বাহির হইবার তাড়া আছে ?” r অন্নদাবাবু কহিলেন, “কিছু না, কিছু না। ঠাণ্ডার দিনে গরম চাটা এক চুমুকে খাইয়া লইলে বেশ ঘামিয়া শরীরটা হালকা হইয়া যায়।” . কিন্তু অন্নদাবাবুর শরীরে ঘর্ম নিৰ্গত হইবার পূর্বেই যোগেন্দ্র অক্ষয়কে লইয়া ঘরে প্রবেশ করিল। আজ অক্ষয়ের বেশভূষায় একটু বিশেষ পারিপাট্য ছিল। হাতে রুপূবীধানাে ছড়ি, বুকের কাছে ঘড়ির VISO