পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি \OO\O যোগেন্দ্র। নলিনাক্ষ ডাক্তার। অন্নদা। নলিনাক্ষ ! যোগেন্দ্র। ভারি চমৎকার বলিতে পারেন। তা ছাড়া, লোকটার জীবনের ইতিহাস শুনিলে আশ্চর্য ইয়া যাইতে হয়। এমন ত্যাগান্ধীকার! এমন দৃঢ়তা ! এরকম মানুষের মতো মানুষ পাওয়া দুর্লভ। আর ঘণ্টা-দুই আগে একটা অস্পষ্ট জনশ্রুতি ছাড়া নলিনাক্ষ সম্বন্ধে যোগেন্দ্র কিছুই জানিত না। হেম একটা আগ্রহ দেখাইয়া কহিল, “বেশ তো বাবা, চলো-না তঁহার বক্তৃতা শুনিতে যাইব ।” হেমনলিনীর এইরূপ উৎসাহের ভাবটাকে অন্নদা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিলেন না ; তথাপি তিনি মনে মনে একটু খুশি হইলেন। তিনি ভাবিলেন, হেম যদি জোর করিয়াও এইরূপ মেলামেশা যাওয়া-আসা করিতে থাকে তাহা হইলে শীঘ্ৰ উহার মন সুস্থ হইবে। মানুষের সহবাসই মানুষের সর্বপ্রকার মনোবৈকল্যের প্রধান ঔষধ। তিনি কহিলেন, “তা বেশ তো যোগেন্দ্র, কাল যথাসময়ে আমাদের মিটিঙে লইয়া যাইয়াে। কিন্তু নলিনাক্ষ সম্বন্ধে কী জািন, বলে তো। অনেক লোকে তো অনেক কথা কয় ।” যে অনেক লোকে অনেক কথা বলিয়া থাকে, প্রথমত যোগেন্দ্র তাহাদিগকে খুব একচেটি গালি দিয়া লইল। বলিল, “ধর্ম লইয়া যাহারা ভড়ং করে, তাহারা মনে করে, কথায় কথায় পরের প্রতি অবিচার ও পরনিন্দা করিবার জন্য তাহারা ভগবানের স্বাক্ষরিত দলিল লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছেধর্মব্যবসায়ীদের মতো এতবড়ো সংকীর্ণচিত্ত বিশ্বনিন্দুক আর জগতে নাই।” বলিতে বলিতে যোগেন্দ্ৰ অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিল । অন্নদা যোগেন্দ্ৰকে ঠাণ্ডা করিবার জন্য বার বার বলিতে লাগিলেন, “সে কথা ঠিক, সে কথা ঠিক । পরের দোষত্রুটি লইয়া কেবলই আলোচনা করিতে থাকিলে মন ছোটাে হইয়া যায়, স্বভাব সন্দিগ্ধ হইয়া উঠে, হৃদয়ের সরসতা থাকে না ।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, তুমি কি আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছ? কিন্তু ধার্মিকের মতো আমার স্বভাব নয় ; আমি মন্দ বলিতেও জানি, ভালো বলিতেও জানি এবং মুখের উপরে স্পষ্ট করিয়া বলিয়া হাতে-হাতেই সব কথা চুকাইয়া ফেলি।” অন্নদা ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “ যোগেন, তুমি কি পাগল হইয়ােছ। তোমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিব (कन ? उाशि कि (ठीभांकि नेि ना ?” তখন ভূরি ভুরি প্রশংসাবাদের দ্বারা পরিপূর্ণ করিয়া যোগেন্দ্ৰ নলিনাক্ষের বৃত্তান্ত বিবরিত করিল। কহিল, “মাতাকে সুখী করিবার জন্য নলিনাক্ষ আচার সম্বন্ধে সংযত হইয়া কাশীতে বাস করিতেছে, এইজন্যই, বাবা, তুমি যাহাদিগকে অনেক লোক বল, তাহারা অনেক কথা বলিতেছে। কিন্তু আমি এজন্য নলিনাক্ষকে ভালোই বলি। হেম, তুমি কী বল ?” হেমনলিনী কহিল, “আমিও তো তাই বলি।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “হেম যে ভালোই বলিবে, তাহা আমি নিশ্চয় জানিতাম। বাবাকে সুখী করিবার ভূমে একটা কিছু আগষ্টকার কারবার উপলক্ষ পাইলে যেন ধাঁচে, তাহা আমি বেশ বুঝতে পাের।” লা দেহকােমলহাসে হেমের মুখের দিকে চাহিলন—হেকালিমী লজ্জায় রক্রিয় মুখখন নত SG | 8S সভা ভঙ্গের পর অন্নদা হেমনলিনীকে লইয়া যখন ঘরে ফিরিলেন তখনো সন্ধ্যা হয় নাই। চা খাইতে বসিয়া অন্নদাবাবু কহিলেন, “আজ বড়ো আনন্দলাভ করিয়াছি।” ইহার অধিক আর তিনি কথা কহিলেন না ; তঁহার মনের ভিতরের দিকে একটা ভাবের স্রোত