পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি g ers & কমলা কাল রাত্রে এখানে আসিয়াছিল কি না বিপিন তাহা নিশ্চয় জানিত না, তাই রমেশের কথায় একপ্রকার সায় দিয়া কহিল, “হা, তিনি উমিকে যেরকম ভালোবাসেন, খুব ভাবিতেছেন বৈকি। কিন্তু ডাক্তার বলিয়াছে, ভাবনার কোনো কারণই নাই।” যাহা হউক, অত্যন্ত উল্লাসের মুখে কল্পনার পূর্ণ উচ্ছাসে বাধা পাইয়া রমেশের মনটা বিকল হইয়া গেল। সে ভাবিতে লাগিল, তাহাদের মিলনে যেন একটা দৈবের ব্যাঘাত আছে। এমন সময় রমেশের বাংলা হইতে উমেশ আসিয়া উপস্থিত হইল। এখানকার অন্তঃপুরে তাহার গতিবিধি ছিল। এই বালকাটাকে শৈলজা স্নেহও করিত। বাড়ির ভিতরে শৈলজার ঘরের মধ্যে সে প্রবেশ করিতেছে দেখিয়া উমির ঘুম ভাঙিবার আশঙ্কায় শৈল তাড়াতাড়ি ঘরের বাহির হইয়া আসিল । । উমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “মা কোথায় মাসিমা ?” শৈল বিস্মিত হইয়া কহিল, “কেন রে, তুই তো কাল তাহাকে সঙ্গে লইয়া ও বাড়িতে গেলি । সন্ধ্যার পর আমাদের লছমনিয়াকে ওখানে পাঠাইবার কথা ছিল, খুঁকির অসুখে তাহা পারি নাই।” উমেশ মুখ স্নান করিয়া কহিল, “ও বাড়িতে তো তাহাকে দেখিলাম না।” শৈল ব্যস্ত হইয়া কহিল, “সে কী কথা ! কাল রাত্রে তুই কোথায় ছিলি ?” উমেশ । আমাকে তো মা থাকিতে দিলেন না। ও বাড়িতে গিয়াই তিনি আমাকে সিধুবাবুদের ওখানে যাত্রা শুনিতে পাঠাইয়াছিলেন । , w শৈল । তোরাও তো বেশ আক্কেল দেখিতেছি । বিষন কোথায় ছিল ? উমেশ । বিষন তো কিছুই বলিতে পারে না। কাল সে খুব তাড়ি খাইয়াছিল। শৈল । যা যা, শীঘ্র বাবুকে ডাকিয়া আন । বিপিন আসিতেই শৈল কহিল, “ওগো, এ কী সর্বনাশ হইয়াছে ?” বিপিনের মুখ পাংশুবৰ্ণ হইয়া গেল। সে ব্যস্ত হইয়া কহিল, “কেন, কী হইয়াছে ?” শৈল। কমল কাল ও বাংলায় গিয়াছিল, তাহাকে তাে সেখানে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না। বিপিন । তিনি কি কাল রাত্রে এখানে আসেন নাই ? শৈল । না গো । উমির অসুখে আনাইব মনে করিয়াছিলাম, লোক কোথায় ছিল ? রমেশবাবু কি বিপিন । বোধ হয় ও বাংলায় দেখিতে না পাইয়া তিনি ঠিক করিয়াছেন কমলা এখানেই আছেন । তিনি তো আমাদের এখানেই আসিয়াছেন । শৈল। যাও যাও, শীঘ্ৰ যাও, তাহাকে লইয়া খোজ করো গে। উমি এখন ঘুমাইতেছে- সে ভালোই আছে । বিপিন ও রমেশ আবার সেই গাড়িতে উঠিয়া বাংলায় ফিরিয়া গেল এবং বিষণকে লইয়া পড়িল । অনেক চেষ্টায় জোড়াতাড়া দিয়া যেটুকু খবর বাহির হইল তাহা এই- কাল বৈকালে কমলা একলা গঙ্গার ধারের অভিমুখে চলিয়াছিল। বিষণ তাহার সঙ্গে যাইবার প্রস্তাব করে, কমলা তাহার হাতে একটা টাকা দিয়া তাহাকে নিষেধ করিয়া ফিরাইয়া দেয় । সে পাহারা দিবার জন্য বাগানের গেটের কাছে বসিয়া ছিল, এমন সময়ে গাছ হইতে সদ্যঃসঞ্চিত ফেনোচ্ছিল তাড়ির কলস বঁাকে করিয়া তাড়িওয়ালা তাহার সম্মুখ দিয়া চলিয়া যাইতেছিল- তাহার পর হইতে বিশ্বসংসারে কী যে ঘটিয়াছে তাহা বিষণের কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট নহে। যে পথ দিয়া কমলাকে গঙ্গার দিকে যাইতে দেখিয়াছিল বিষণ তাহা দেখাইয়া দিল । সেই পথ অবলম্বন করিয়া শিশিরসিক্ত শস্যক্ষেত্রের মাঝখান দিয়া রমেশ বিপিন ও উমেশ কমলার সন্ধানে চলিল। উমেশ হৃতশাবক শিকারী জন্তুর মতো চারিদিকে তীক্ষা ব্যাকুল দৃষ্টি প্রেরণ করিতে গীগিল। গঙ্গার তটে আসিয়া তিন জনে একবার দাড়াইল। সেখানে চারি দিক উন্মুক্ত। ধূসর বালুকা ঐউত্তরেীদ্রে ধুধু করিতেছে। কোথাও কাহাকেও দেখা গেল না। উমেশ উচ্চকণ্ঠে চীৎকার করিয়া উকিল, “মা, মা গো, মা কোথায় ?” ও পারের সুদূর উচ্চতীর হইতে তাহার প্রতিধ্বনি ফিরিয়া 이는