পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSby রবীন্দ্র-রচনাবলী কহিলাম, 'পাকা ।” সেই সন্ধ্যাবেলাতেই স্বয়ং তারিণী চাটুজ্জে আমাদের তাঁবুতে আসিয়া উপস্থিত। ব্ৰাহ্মণ হাতে পইতা জড়াইয়া জোড়হাত করিয়া কহিলেন, “আমাকে উদ্ধার করিতেই হইবে । মেয়েটি স্বচক্ষে দেখুন, যদি পছন্দ না হয় তো অন্য কথা— কিন্তু শত্রুপক্ষের কথা শুনিবেন না। আমি বলিলাম, “দেখিবার দরকার নাই, দিন স্থির করুন।’ তারিণী কহিলেন, ‘পরশু দিন ভালো আছে, পরশুই হইয়া যাক ৷” তাড়াতাড়ির দোহাই দিয়া বিবাহে যথাসাধ্য খরচ বঁাচাইবার ইচ্ছা তঁহার ছিল। বিবাহ তো হইয়া গেল।” ক্ষেমংকরী চমকিয়া উঠিয়া কহিলেন, “বিবাহ হইয়া গেল- বল কী নলিন ৷” নলিনাক্ষ। হা, হইয়া গেল, বধু লইয়া নীেকাতেও উঠিলাম। যেদিন বৈকালে উঠিলাম, সেইদিনই ঘণ্টা-দুয়েক বাদে সূর্যাস্তের এক দণ্ড পরে হঠাৎ সেই অকালে ফায়ুন মাসে কোথা হইতে অত্যন্ত গরম একটা ঘূর্ণিবাতাস আসিয়া এক মুহুর্তে আমাদের নীেক উলটাইয়া কী করিয়া দিল, কিছু যেন বােঝা গেল না। ক্ষেমংকরী বলিলেন, “মধুসূদন !” তাহার সর্বশরীরে কাটা দিয়া উঠিল। নলিনাক্ষ। ক্ষণকাল পরে যখন বুদ্ধি ফিরিয়া আসিল তখন দেখিলাম, আমি নদীতে এক জায়গায় সীতার দিতেছি, কিন্তু নিকটে কোনো নীেকা বা আরোহীর কোনো চিহ্ন নাই। পুলিসে খবর দিয়া খোজ অনেক করা হইয়াছিল, কিন্তু কোনাে ফল হইল না। ক্ষেমংকরী পাংশুবৰ্ণ মুখ করিয়া কহিলেন, “যাক, যা হইয়া গেছে তা গেছে, ও কথা আমার কাছে আর কখনো বলিস নে- মনে করিতেই আমার বুক কঁপিয়া উঠিতেছে।” নলিনাক্ষ । এ কথা আমি কোনোদিনই তোমার কাছে বলিতাম না, কিন্তু বিবাহের কথা লইয়া তুমি নিতান্তই জেদ করিতেছি বলিয়াই বলিতে হইল । মুকলিন একবার এক দৃষ্টিল মিছিলহল বলিয়া তুই ইহজীবনে কখনো বিবাহই तेदि •ा ?” নলিনাক্ষ কহিল, “সেজন্য নয় মা, যদি সে মেয়ে বাচিয়া থাকে ?” ক্ষেমংকরী। পাগল হইয়াছিস । বাচিয়া থাকিলে তোকে খবর দিত না ? নলিনাক্ষ। আমার খবর সে কী জানে ? আমার চেয়ে অপরিচিত তাহার কাছে কে আছে ? বোধ হয় সে আমার মুখও দেখে নাই। কাশীতে আসিয়া তারিণী চাটুজ্জেকে আমার ঠিকানা জানাইয়াছি ; তিনিও কমলার কোনো খোজ পান নাই বলিয়া আমাকে চিঠি লিখিয়াছেন । ক্ষেমংকরী । তবে আবার কী । নলিনাক্ষ। আমি মনে মনে ঠিক করিয়াছি, পুরা একটি বৎসর অপেক্ষা করিয়া। তবে তাহার মৃত্যু স্থির করিব । ক্ষেমংকরী। তোমার সকল বিষয়েই বাড়াবাড়ি। আবার এক বৎসর অপেক্ষা করা কিসের জন্য ? নলিনাক্ষ । মা, এক বৎসরের আর দেরিই বা কিসের । এখন অস্ত্রান ; পৌঁষে বিবাহ হইতে পরিবে: না ; তাহার পরে মাঘটা কাটাইয়া ফাল্লুন। ক্ষেমংকরী । আচ্ছা, বেশ । কিন্তু পাত্রী ঠিক রহিল । হেমনলিনীর ব্যাপকে আমি কথা দিয়াছি। নলিনাক্ষ কহিল, “মা, মানুষ তো কেবল কথাটুকুমাত্রই দিতে পারে, সে কথার সফলতা দেওয়া ক্ষেমংকরী । যাই হােক বাছা, তোমার এই ব্যাপারটা শুনিয়া এখনো আমার গা কঁাপিতেছে। নলিনাক্ষ । সে তো আমি জানি মা, তোমার এই মন সুস্থির হইতে অনেক দিন লাগিবে। তোমার মনটা একবার একটু নাড়া পাইলেই তাহার আন্দােলন কিছুতেই আর থামিতে চায় না। সেইজন্যই তো মা, তোমাকে এরকম সব খবর দিতেই চাই না । ক্ষেমংকরী। ভালোই কর বাছা- আজকাল আমার কী হইয়াছে জানি না, একটা মন্দ-কিছু শুনিলেই তাঁর ভয় কিছুতেই ঘোচে না। আমার একটা ডাকের চিঠি খুলিতে ভয় করে, পাছে তাহাতে