পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नौकाफूदि t VVS নবীনকালী । ওমা, সে কী কথা ! তোমার বয়স তো বড়ো বেশি বোধ হয় না। তাহাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “পনেরোর বেশি হইবে না।” কমলা কহিল, “বয়স ঠিক জানি না, বোধ করি, পনেরোই হইবে।” নবীনকালী । তুমি ব্ৰাহ্মণের মেয়ে বটে ? কমলা কহিল, ”হা ।” নবীনকালী কহিলেন, “তোমাদের বাড়ি কোথায় ?” কমলা । কখনো শ্বশুরবাড়ি যাই নাই, আমার বাপের বাড়ি বিশুখালি । কমলার পিত্ৰালয় বিশুখালিতেই ছিল, তাহা সে জানিত । নবীনকালী । তোমার বাপ-মা- কমলা । আমার বাপ-মা কেহই নাই । নবীনকালী । হরি বলে ! তবে তুমি কী করিবে ? কমলা। কাশীতে যদি কোনো ভদ্র গৃহস্থ আমাকে বাড়িতে রাখিয়া দু-বেলা দুটি খাইতে দেন, তবে আমি কাজ করিব । আমি রাধিতে পারি । নবীনকালী । বিনা-বেতনে পাচিক ব্ৰাহ্মণী লাভ করিয়া মনে মনে ভারি খুশি হইলেন। কহিলেন, “আমাদের তো দরকার নাই- বামুন-চাকর সমস্তই আমাদের সঙ্গে আছে। আমাদের আবার যে-সে বামুন হইবার জো নাই- কর্তার খাবারের একটু এদিক-ওদিক হইলে আর কি রক্ষা আছে ৷ বামুনকে মাইনে দিতে হয় চৌদ্দ টাকা, তার উপরে ভাত-কাপড় আছে। তা হােক, ব্ৰাহ্মণের মেয়ে, তুমি বিপদে পড়িয়াছ— তা, চলো, আমাদের ওখানেই চলো। কত লোক খাচ্ছে-দাচ্ছে, কত ফেলা-ছড়া যায়, আর-এক জন বাড়িলে কেহ জানিতেও পরিবে না । আমাদের কাজও তেমন বেশি নয় । এখানে কেবল কর্তা আর আমি আছি । মেয়েগুলির সব বিবাহ দিয়াছি ; তা, তাহারা বেশ বড়ো ঘরেই পড়িয়াছে । আমার একটিমাত্র ছেলে, সে হাকিম, এখন সেরাজগঞ্জে আছে, লাট-সাহেবের ওখান হইতে দু-মাস অন্তর তাহার নামে চিঠি আসে। আমি কর্তাকে বলি, আমাদের নোটাের তো অভাব কিছুই নাই, কেন তাহার এই গেরো। এতবড়ো হাকিমি সকলের ভাগ্যে জোটে না, তা জানি, কিন্তু বাছাকে তবু তো সেই বিদেশে পড়িয়া থাকিতে হয়। কেন ? দরকার কী ? কর্তা বলেন, “ওগো সেজন্য নয়, সেজন্য নয় । তুমি মেয়েমানুষ, বোঝা না । আমি কি রোজগারের জন্য নোটােকে চাকরিতে দিয়াছি ? আমার অভাব কিসের ? তবে কিনা, হাতে একটা কাজ থাকা চাই, নহিলে অল্প বয়স, কি জানি কখন কী মতি হয় । ” পালে বাতাসের জোর ছিল, কাশী পৌঁছিতে দীর্ঘকাল লাগিল না । শহরের ঠিক বাহিরেই অল্প একটু বাগানওয়ালা একটি দোতলা বাড়িতে সকলে গিয়া উঠিলেন । সেখানে চৌদ্দ টাকা বেতনের বামুনের কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না— একটা উড়ে বামুন ছিল, অনতিকাল পরেই নবীনকালী তাহার উপরে একদিন হঠাৎ অত্যন্ত আগুন হইয়া উঠিয়া বিনা বেতনে তাহাকে বিদায় করিয়া দিলেন । ইতিমধ্যে চৌদ্দ টাকা বেতনের অতি দুর্লভ দ্বিতীয় একটি পাচক জুটিবার অবকাশে কমলাকেই সমস্ত রাধা-বাড়ার ভার লইতে হইল । নবীনকালী কমলাকে বার বার সতর্ক করিয়া কহিলেন, “ দেখো বাছা, কাশী শহর ভালো জায়গা নয় । তোমার অল্প বয়স । বাড়ির বাহিরে কখনো বাহির হইয়ো না । গঙ্গাস্নান-বিশ্বেশ্বর দর্শনে আমি যখন যাইব তোমাকে সঙ্গে করিয়া লইব ।” কমলা পাছে দৈবাৎ হাতছাড়া হইয়া যায় নবীনকালী এজন্য তাহাকে অত্যন্ত সাবধানে রাখিলেন । বাঙালি মেয়েদের সঙ্গেও তাঁহাকে বড়ো-একটা আলাপের অবসর দিতেন না। দিনের বেলা তো কাজের অভাব ছিল না- সন্ধ্যার পরে একবার কিছুক্ষণ নবীনকালী তাহার যে ঐশ্বৰ্য, যে গহনাপত্র, যে সোনারুপার বাসন, যে মখমল-কিংখাবের গৃহসজ্জা চোরের ভয়ে কাশীতে আনিতে পারেন নাই, তাহাঁরই আলোচনা করিতেন । ‘কাসার থালায় খাওয়া তো কর্তার কোনোকালে অভ্যাস নাই, তাই VO SRR