পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি VON) কমলাকে জানাইত 'বামুন-ঠাকরুন, বড়ো ক্ষুধা পাইয়াছে তখন সে তাহাদিগকে কিছু-কিছু খাইতে না দিয়া কোনােমতেই থাকিতে পারিত না। এমনি করিয়া বাড়ির চাকর-বাকর দুই দিনেই কমলার একান্ত বশ মানিয়াছে। উপর হইতে রব আসিল, “রান্নাঘরের দরজার কাছে দাড়াইয়া কিসের পরামর্শ চলিতেছে রে তুলসী ? আমার বুঝি চােখ নাই মনে করিস ? শহরে যাইবার পথে একবার বুঝি রান্নাঘর না মাড়াইয়া গেলে চলে না ? এমনি করিয়াই জিনিসপত্রগুলো সরাইতে হয় বটে ! বলি বামুন-ঠাকরুন, রাস্তায় পড়িয়া ছিলে, দয়া করিয়া তোমাকে আশ্রয় দিলাম, এমনি করিয়াই তাহার শোধ তুলিতে হয় বুঝি !” সকলেই তঁহার জিনিসপত্র চুরি করিতেছে, এই সন্দেহ নবীনকালীকে কিছুতেই ত্যাগ করে না। যখন প্রমাণের লেশমাত্ৰও না থাকে তখনো তিনি আন্দাজে ভৎসনা করিয়া লন । তিনি স্থির করিয়াছেন যে, অন্ধকারে ঢ়েলা মরিলেও অধিকাংশ ঢ়েলা ঠিক জায়গায় গিয়া পড়ে আর তিনি যে সর্বদা সতর্ক আছেন ও তঁহাকে ফাঁকি দিবার জো নাই, ভূত্যেরা ইহা বুঝিতে পারে। আজ নবীনকালীর তীব্ৰবাক কমলার মনেও বাজিল না। সে আজ কেবল কলের মতো কাজ করিতেছে, তাহার মনটা যে কোনখানে উধাও হইয়া গেছে তাহার ঠিকানা নাই। নীচে রান্নাঘরের দরজার কাছে কমলা দাড়াইয়া অপেক্ষা করিতেছিল। এমন সময় তুলসী ফিরিয়া আসিল, কিন্তু সে একা আসিল । কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “তুলসী, কই ডাক্তারবাবু আসিলেন না ?” তুলসী কহিল, “না, তিনি আসিলেন না।” কমলা | কেন ? তুলসী । তাহার মা'র অসুখ করিয়াছে। কমলা। মা'র অসুখ ? ঘরে আর কি কেহ নাই ? তুলসী। না, তিনি তো বিবাহ করেন নাই। কমলা । বিবাহ করেন নাই, তুই কেমন করিয়া জানিলি ? তুলসী । চাকরীদের মুখে তো শুনি, তাহার স্ত্রী নাই। কমলা । হয়তো তাহার স্ত্রী মারা গেছে। তুলসী। তা হইতে পারে। কিন্তু তাহার চাকর ব্ৰজ বলে, তিনি যখন রঙপুরে ডাক্তারি করিতেন, उशन उंश क्षेी छिल ना | উপর হইতে ডাক পড়িল, “তুলসী !” কমলা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল এবং তুলসী উপরে চলিয়া গেল। নলিনাক্ষ— রঙপুরে ডাক্তারি করিতেন- কমলার মনে আর তো কোনো সন্দেহ নাই। তুলসী নামিয়া আসিলে পুনর্বার কমলা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “দেখ, তুলসী, ডাক্তারবাবুর নামে আমার একটি আত্মীয় আছেন— বল দেখি, উনি ব্ৰাহ্মণ তো বটেন ?” তুলসী । হা, ব্ৰাহ্মণ, চাটুজে । গৃহিণীর দৃষ্টিপাতের ভয়ে তুলসী বামুন-ঠাকরুনের সঙ্গে অধিকক্ষণ কথাবার্তা কহিতে সাহস করিল না, সে চলিয়া গেল । --- ro কমলা নবীনকালীর নিকট গিয়া কহিল, “কাজকর্ম সমস্ত সক্রিয়া আজ আমি একবার দশাশ্বমেধ ঘাটে মান করিয়া আসিব ।” নবীনকালী। তােমার সকল অনাসৃষ্টি। কর্তার আজ অসুখ, আজ কখন কী দরকার হয়, তাহা বলা যায় না— আজ তুমি গেলে চলিবে কেন ? কমলা কহিল, “আমার একটি আপনার লোক কাশীতে আছেন খবর পাইয়াছি, তঁহাকে একবার দেখিতে যাইব ।” নবীনকালী । এ-সব ভালো কথা নয়। আমার যথেষ্ট বয়স হইয়াছে, আমি এ সব বুঝি । খবর তোমাকে কে আনিয়া দিল ? তুলসী বুঝি ? ও ছোড়াটাকে আর রাখা নয়। শোনো বলি