পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি Ꮤ98Ꮼ বাহির হইয়া গেল । কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “উমেশ, তুই কোথা হইতে আসিতেছিস ?” কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “সেখানে সকলে ভালো আছেন তো ? খুড়ামশায়ের কী খবর ?” উমেশ কহিল, “তিনি ভালো আছেন।” কমলা | আমার দিদি কেমন আছেন ? উমেশ । মা, তিনি তোমার জন্য কঁদিয়া অনর্থ করিতেছেন। তৎক্ষণাৎ কমলার দুই চোখ জলে ভরিয়া গেল। জিজ্ঞাসা করিল, “উমি কেমন আছে রে ? সে তার মাসিকে কি মাঝে মাঝে মনে করে ?” উমেশ কহিল, “তুমি তাহাকে যে এক-জোড়া গহনা দিয়া আসিয়াছিলে সেইটে না পরাইলে তাহাকে কোনােমতে দুধ খাওয়ানাে যায় না। সেইটে পরিয়া সে দুই হাত ঘুরাইয়া বলিতে থাকে 'মাসি গা-গ গেছে, আর তার মা'র চোখ দিয়া জল পড়িতে থাকে ৷” বাহির করিয়া দেখাইল । যাই কহিল, “পারিব।” বলিয়া তখনই টিকিট কিনিয়া আনিল। গাড়ি প্রস্তুত ছিল, গাড়িতে উঠাইয়া দিল ; কহিল, “মা, আমি পাশের কামরাতেই রহিলাম।” কাশী স্টেশনে নামিয়া কমলা উমেশকে জিজ্ঞাসা করিল, “উমেশ, এখন কোথায় যাই বল দেখি ?” উমেশ কহিল, “মা, তুমি কিছুই ভাবিয়াে না ; আমি তোমাকে ঠিক জায়গায় লইয়া যাইতেছি।” কমলা। ঠিক জায়গা কী রে! তুই এখানকার কী জানিস বল দেখি । উমেশ কহিল, “সব জানি । দেখো তো কোথায় লইয়া যাই।” বলিয়া কমলাকে একটা ভাড়াটে গাড়িতে তুলিয়া দিয়া সে কোচাবাক্সে চড়িয়া বসিল। একটা বাড়ির সামনে গাড়ি দাড়াইলে উমেশ কহিল, “মা, এইখানে নামো ।” উঠিল, “দাদামশায়, বাড়ি আছ তো ?” পাশের একটা ঘর হইতে সাড়া আসিল, “কে ও উমশে নাকি ! তুই কোথা থেকে এলি.?” পরীক্ষণেই হকা-হাতে স্বয়ং চক্রবর্তী-খুড়া আসিয়া উপস্থিত। উমেশ সমস্ত মুখ পরিপূর্ণ করিয়া নীরবে হাসিতে লাগিল। বিস্মিত কমলা ভূমিষ্ঠ হইয়া চক্রবর্তীকে প্ৰণাম করিল। খুড়ার খানিকক্ষণ মুখে আর কথা সরিল না ; তিনি কী যে বলিবেন, ছকটা কোনখানে রাখিবেন, কিছুই ভাবিয়া পাইলেন না। অবশেষে কমলার চিবুক ধরিয়া তাহার লজ্জিত নতমুখ একটুখানি উঠাইয়া কহিলেন, “মা আমার ফিরে এল! চলো চলো, উপরে চলো।” "ও শৈল, শৈল ! দেখে যা, কে এসেছে।” শৈলজা তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয়া বারান্দায় সিঁড়ির সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল। কমলা তাহার পায়ের ধূলা লইয়া প্ৰণাম করিল। শৈল তাড়াতাড়ি তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া তাহার ললাট