পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\988 রবীন্দ্র-রচনাবলী চুম্বন করিল। চােখের জলে দুই কপোল ভাসাইয়া দিয়া কহিল, “মা গো মা ! আমাদের এমন করিয়াও कैलाश शाशठ श्श !” খুড়া কহিলেন, “ও-সব কথা থাক শৈল, এখন উহার নাওয়া-খাওয়া সমস্ত ঠিক করিয়া দাও।” এমন সময় উমা মাসি মাসি' করিয়া দুই হাত তুলিয়া ছুটিয়া বাহির হইয়া আসিল। কমলা তৎক্ষণাৎ তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া বুকে চাপিয়া ধরিয়া চুমা খাইয়া খাইয়া অস্থির করিয়া দিল । শৈলজা কমলার রুক্ষ কেশ ও মলিন বস্ত্ৰ দেখিয়া থাকিতে পারিল না । তাহাকে টানিয়া লইয়া গিয়া যত্ন করিয়া স্নান করাইল, নিজের ভালো কাপড় একখানি বাহির করিয়া তাহাকে পরাইয়া দিল। কহিল, “কাল রাত্রে বুঝি ভালো করিয়া ঘুম হয় নাই। চােখ বসিয়া গেছে যে । ততক্ষণ তুই বিছানায় একটু গড়াইয়া নে । আমি রান্না সারিয়া আসিতেছি।” কমলা কহিল, “না দিদি, তোমার সঙ্গে চলো আমিও রান্নাঘরে যাই ।” দুই সখীতে একত্রে রাধিতে গেল। চক্রবর্তী-খুড়া অক্ষয়ের পরামর্শে যখন কাশীতে আসিবার জন্য প্রস্তুত হইলেন শৈলজা ধরিয়া পড়িল, “বাবা, আমিও তোমাদের সঙ্গে কাশী যাইব ।” খুড়া কহিলেন, “বিপিনের তো এখন ছুটি নাই।” শৈল কহিল, “তা হােক, আমি একলাই যাইব । মা আছেন, উহার অসুবিধা হইবে না।” স্বামীর সহিত এরূপ বিচ্ছেদের প্রস্তাব শৈল পূর্বে কোনােদিন করে নাই। খুড়াকে রাজি হইতে হইল। গাজিপুর হইতে যাত্ৰা করিলেন । কাশী স্টেশনে নামিয়া দেখেন, উমেশও গাড়ি হইতে নামিতেছে।- “আরে তুই এলি কেন রে!” সকলে যে কারণে আসিয়াছেন তাহারও সেই একই কারণ। কিন্তু উমেশ আজকাল খুড়ার গৃহকার্যে নিযুক্ত হইয়াছে ; সে এরূপ অকস্মাৎ চলিয়া আসিলে গৃহিণী অত্যন্ত রাগ করবেন জানিয়া সকলে মিলিয়া অনেক চেষ্টা করিয়া উমেশকে গাজিপুরে ফিরাইয়া পাঠান। তাহার পরে কী ঘটিয়াছে তাহা সকলেই জানেন। সে গাজিপুরে কোনােমতেই টিকিতে পারিল না। গৃহিণী তাঁহাকে বাজার করিতে পাঠাইয়াছিলেন, সেই বাজারের পয়সা লইয়া সে একেবারে গঙ্গা পার হইয়া স্টেশনে আসিয়া উপস্থিত । চক্রবর্তী-গৃহিণী সেদিন এই ছোকরাটির জন্য বৃথা অপেক্ষা করিয়াছিলেন। (ሱ (፩ দিনের মধ্যে অক্ষয় এক সময় চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করিতে আসিয়াছিল । তিনি তাহাকে কমলার প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে কোনো কথাই বলিলেন না। রমেশের প্রতি অক্ষয়ের যে বিশেষ বন্ধুভাব নাই, তাহা খুড়া বুঝিতে পারিয়াছেন। কমলা কোন চলিয়া গিয়াছিল, কোথায় চলিয়া গিয়াছিল, এ সম্বন্ধে বাড়ির কেহ কোনো প্রশ্নই করিল না- কমলা যেন ইহাদের সঙ্গেই কাশী বেড়াইতে আসিয়াছে, এমনিভাবে দিন কাটিয়া গেল । উমির দাই লছমনিয়া স্নেহমিশ্ৰিত ভংসনার ছলে কিছু বলিতে গিয়াছিল, খুড়া তৎক্ষণাৎ তাহাকে আড়ালে ডাকিয়া শাসন করিয়া দিয়াছিলেন । রাত্রে শৈলজা কমলাকে আপনার বিছানায় লইয়া শুইল । তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া তাহাকে বুকের কাছে টানিয়া লইল, এবং দক্ষিণ হস্ত দিয়া তাহার গায়ে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিল। এই কোমল হস্তস্পর্শ নীরব প্রশ্নের মতো কমলাকে তাহার গোপন বেদনার কথা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল । কমলা কহিল, “দিদি, তোমরা কী মনে করিয়াছিলে ? আমার উপরে রাগ করা নাই ?” শৈল কহিল, “আমাদের কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নাই ? আমরা কি এটা বুঝি নাই, সংসারে তোর যদি কোনো পথ থাকিত তবে তুই এই ভয়ানক পথ লইতিস না। আমরা কেবল এই বলিয়া কঁাদিয়াছি, ভগবান তোকে কেন এমন সংকটে ফেলিলেন। যে লোক কোনো অপরাধ করিতে জানে না, সেও দণ্ড ቀበ፱ !”