পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি V8s নলিনাক্ষ বাহির হইতে বাড়িতে ফিরিলেই প্ৰথমে তাহার মাকে দেখিতে যাইত। তাহার মাতার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে চিন্তা তাহাকে কখনোই ছাড়িত না। আজ বাড়িতে প্রবেশ করিবামাত্র রান্নাঘরের শব্দ এবং গন্ধ তাহাকে আক্রমণ করিল। মা এখন রান্নায় প্রবৃত্ত আছেন মনে করিয়া নলিনাক্ষ রান্নাঘরের দরজার সামনে আসিয়া উপস্থিত হইল। পদশব্দে চকিত কমলা পিছন ফিরিয়া চাহিতেই একেবারে নলিনাক্ষের সহিত তাহার চোখে চোখে সাক্ষাৎ হইয়া গেল। তাড়াতাড়ি হাতাটা রাখিয়া ঘোমটা টানিয়া দিবার বৃথা চেষ্টা করিল— কোমরে আঁচল জড়ানো ছিল- টানাটানি করিয়া ঘোমটা যখন মাথার কিনারায় উঠিল বিস্মিত নলিনাক্ষ তখন সেখান হইতে চলিয়া গেছে। তাহার পর কমলা যখন হাতা তুলিয়া লইল তখন তাহার হাত 部囚灭1 পূজা সকাল-সকাল সারিয়া ক্ষেমংকরী যখন রান্নাঘরে গেলেন, দেখিলেন, রান্না। সারা হইয়া গেছে। ঘর ধুইয়া কমলা পরিষ্কার করিয়া রাখিয়াছে ; কোথাও পোড়াকাঠ বা তরকারির খোসা বা কোনোপ্রকার অপরিচ্ছন্নতা নাই। দেখিয়া ক্ষেমংকরী মনে মনে খুশি হইলেন ; কহিলেন, “মা, তুমি ব্ৰাহ্মণের মেয়ে বটে ।” নলিনাক্ষ আহারে বসিলে ক্ষেমংকরী তাহার সম্মুখে বসিলেন ; আর-একটি সংকুচিত প্ৰাণী কান পাতিয়া দ্বারের আড়ালে দাড়াইয়া ছিল । উকি মারিতে সাহস করিতেছিল না— ভয়ে মরিয়া যাইতেছিল, পাছে তাহার রান্না খারাপ হইয়া থাকে । নলিনাক্ষ ভোজ্যপদার্থ সম্বন্ধে সমজদার ছিল না, তাই ক্ষেমংকরী এরূপ অনাবশ্যক প্রশ্ন কখনো তাহাকে করিতেন না ; আজ বিশেষ কৌতুহলবশতই জিজ্ঞাসা করিলেন। নলিনাক্ষ যে অদ্যকার রান্নাঘরের নূতন রহস্যের পরিচয় পাইয়াছে তাহা তাহার মা জানিতেন না। ইদানীং মাতার শরীর খারাপ হওয়াতে নলিনাক্ষ রাধিবার জন্য লোক নিযুক্ত করিতে মাকে অনেক পীড়াপীড়ি করিয়াছে, কিন্তু কিছুতেই তাঁহাকে রাজি করিতে পারে নাই। আজ নূতন লোককে রন্ধনে নিযুক্ত দেখিয়া সে মনে মনে খুশি হইয়াছে। রান্না কিরূপ হইয়াছে তাহা সে বিশেষ মনোযোগ করে নাই, কিন্তু উৎসাহের সহিত কহিল, “রান্না চমৎকার হইয়াছে মা !” আড়াল হইতে এই উৎসাহবাক্য শুনিয়া কমলা আর স্থির হইয়া দাড়াইয়া থাকিতে পারিল না । সে দ্রুতপদে পাশের একটা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আপনার চঞ্চল বক্ষকে দুই বাহুর দ্বারা পীড়ন করিয়া ধরিল | আহারান্তে নলিনাক্ষ আপনার মনের মধ্যে কী-একটা অস্পষ্টতাকে স্পষ্ট করিবার চেষ্টা করিতে করতে প্রত্যহিক অভ্যাস অনুসারে নিভৃত অধ্যয়নে চলিয়া গেল। s l বৈকালে ক্ষেমংকরী কমলাকে লইয়া নিজে তাহার চুল বাধিয়া সীমান্তে সিঁদুর পরাইয়া দিলেন ; তাহার মুখ একবার এ পাশে, একবার ও পাশে ফিরাইয়া ভালো করিয়া দেখিলেন- কমলা লজ্জায় * কুকুৰা বসিয়া বহিল। ক্ষেকের মনে মনে কহিলেন, আহা, আমি যদি এইরকমের একটি পাইতাম !" সেই রাত্রেই ক্ষেমংকরীর আবার জ্বর আসিল । নলিনাক্ষ উদবিগ্ন হইয়া উঠিল। কহিল, “মা, তোমাকে আমি কিছুদিন কাশী হইতে অন্য কোথাও লইয়া যাইব । এখানে তোমার শরীর ভালো থাকিতেছে না।” ক্ষেমঙ্করী কহিলেন, “সেটি হবে না বাছা! দু-চারদিন বীচাইয়া রাখিবার আশায় আমাকে যে কাশী ইৗড়িয়া অন্য কোথাও লইয়া মারিবি, সেটি হবে না। ও কী মা, তুমি যে দরজার পাশে দাড়াইয়া আছ! যাও যাও, শুতে যাও । সমস্ত রাত আমন জাগিয়া কাটাইলে চলিবে না। আমি যে-কয়দিন ব্যামোতে আছি তোমাকেই তো সব দেখিতে শুনিতে হইবে। রাত জাগিলে পরিবে কেন ? যা তো নলিন, Roo e Go (või "