পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8Q@ গােরা চিঠিপত্র লিখিয়া অনেকটা সময় কাটাইয়া দিল। গােরা তাহার উপর রাগ করিয়াছে বিনয় তাহা আজ সকালে স্পষ্ট দেখিয়া গেছে, তবু যে সে এই রাগ মিটাইয়া ফেলিবার জন্য গোরার কাছে শুনেিয় সুস্থ হহঁতেই পারে না জানিয়া সে সকল কর্মর মধেই কিলে পশব্দের জন্য কন १ाठिशा श्लि | বেলা বহিয়া গেল— বিনয় আসিল না। লেখা ছাড়িয়া গোরা উঠিবে মনে করিতেছে এমন সময় মহিম আসিয়া ঘরে ঢুকিলেন। আসিয়াই চেকিতে বসিয়া পড়িয়া কহিলেন, “শশিমুখীর বিয়ের কথা কী : ভাবিছ গোরা ?” এ কথা গোরা এক দিনের জন্যও ভাবে নাই, সুতরাং অপরাধীর মতো তাহাকে চুপ করিয়া থাকিতে হইল । বাজারে পাত্রের মূল্য যে কিরূপ চড়া এবং ঘরে অর্থের অবস্থা যে কিরূপ অসচ্ছল তাহা আলোচনা করিয়া গোরাকে একটা উপায় ভাবিতে বলিলেন । গোরা যখন ভাবিয়া কিনারা পাইল না। তখন তিনি তাহাকে চিন্তাসংকট হইতে উদ্ধার করিবার জন্য বিনয়ের কথাটা পাড়িলেন। এত ঘোরাফের করিবার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু মহিম গোরাকে মুখে যাই বলুন মনে মনে ভয় করিতেন। এ প্রসঙ্গে বিনয়ের কথা যে উঠিতে পারে গোরা তাহা কখনো স্বপ্নেও ভাবে নাই। বিশেষত গোরা এবং বিনয় স্থির করিয়াছিল, তাহারা বিবাহ না করিয়া দেশের কাজে জীবন উৎসর্গ করিবে । গোরা তাই মহিম কহিলেন, “এই বুঝি তোমাদের হিন্দুয়ানি ! হাজার টিকি রােখ আর ফোটা কািট সাহেবিয়ানা হাড়ের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে । শাস্ত্রের মতে বিবাহটা যে ব্ৰাহ্মণের ছেলের একটা সংস্কার তা জান ?” মহিম এখনকার ছেলেদের মতো আচারও লঙঘন করেন না, আবার শাস্ত্রের ধারও ধারেন না । হােটেলে খানা খাইয়া বাহাদুরি করাকেও তিনি বাড়াবাড়ি মনে করেন, আবার গোরার মতো সর্বদা শ্রুতিস্মৃতি লইয়া ঘাটাঘাটি করাকেও তিনি প্রকৃতিস্থ লোকের লক্ষণ বলিয়া জ্ঞান করেন না। কিন্তু যস্মিন দেশে যদাচারঃ- গোরার কাছে শাস্ত্রের দোহাই পাড়িতে হইল। এ প্রস্তাব যদি দুই দিন আগে আসিত তবে গোরা একেবারে কানেই লাইত না । আজ তাহার মনে হইল, কথাটা নিতান্ত উপেক্ষার যোগ্য নহে। অন্তত এই প্রস্তাবটা লইয়া এখনই বিনয়ের বাসায় যাইবার একটা উপলক্ষ জুটিল। গোরা শেষকালে বলিল, “আচ্ছা, বিনয়ের ভাবখানা কী বুঝে দেখি ।” মহিম কহিলেন, “সে আর বুঝতে হবে না । তোমার কথা সে কিছুতেই ঠেলতে পারবে না। ও ঠিক হয়ে গেছে। তুমি বললেই হবে।” সেই সন্ধ্যার সময়েই গোরা বিনয়ের বাসায় আসিয়া উপস্থিত । ঝড়ের মতো তাহার ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল ঘরে কেহ নাই। বেহারাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করাতে সে কহিল, “বাবু আটাত্তর নম্বর বাড়িতে গিয়াছেন।” শুনিয়া গোরার সমস্ত মন বিকল হইয়া উঠিল । আজ সমস্ত দিন যাহার জন্য গোরার মনে শান্তি ছিল না। সেই বিনয় আজকাল গোরার কথা মনে করিবার অবকাশমাত্র পায় না। গোরা রাগই করুক আর দুঃখিতই হউক, বিনয়ের শান্তি ও সান্তুনার কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। পরেশবাবুর পরিবারদের বিরুদ্ধে, ব্রাহ্মসমাজের বিরুদ্ধে, গোরার অন্তঃকরণ একেবারে বিষাক্ত ইয়া উঠিল। সে মনের মধ্যে প্রকাণ্ড একটা বিদ্রোহ বহন করিয়া পরেশবাবুর বাড়ির দিকে ছুটিল। ইচ্ছা ছিল সেখানে এমন সকল কথা উত্থাপন করিবে যাহা শুনিয়া এই ব্ৰাহ্ম-পরিবারের হাড়ে জ্বালা ধরিবে এবং বিনয়েরও আরাম বােধ হইবে না। পরেশবাবুর বাসায় গিয়া শুনিল তাহারা কেহই বাড়িতে নাই, সকলেই উপাসনামন্দিরে গিয়াছেন। মুহূর্তকালের জন্য সংশয় হইল বিনয় হয়তো যায় নাই— সে হয়তো এইক্ষণেই গোরার বাড়িতে oro থাকিতে পারিল না। গোরা তাহার স্বাভাবিক ঝড়ের গতিতে মন্দিরের দিকেই গেল। দ্বারের কাছে