পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 88s দিদি, তুমি বোঝ নি ? সত্যি বলে ।” সুচরিতা ললিতার মতো এ কথা এমন করিয়া ভাবেই নাই। কারণ, গােরাকে সম্পূর্ণরূপে জানিবার জন্যই তাহার কৌতুহল ব্যগ্র হইয়াছিল- বিনয়কে স্বতন্ত্র করিয়া দেখিবার জন্য তাহার আগ্রহই ছিল না। সুচরিতা ললিতার প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না দিয়া কহিল, “আচ্ছা, বেশ, তোর কথাই মেনে নেওয়া গেল— তা কী করতে হবে বল।” ললিতা। আমার ইচ্ছা করে ওঁর বন্ধুর বঁাধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওঁকে স্বাধীন করে দিতে । সুচরিতা। চেষ্টা করে দেখ-না ভাই। ললিতা। আমার চেষ্টায় হবে না- তুমি একটু মনে করলেই হয়। সুচরিতা যদিও ভিতরে ভিতরে বুঝিয়ছিল যে, বিনয় তাহার প্রতি অনুরক্ত তবু সে ললিতার কথা হাসিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করিল। ললিতা কহিল, “গৌরমোহনবাবুর শাসন কাটিয়েও উনি যে তোমার কাছে এমন করে ধরা দিতে আসছেন তাতেই আমার ওঁকে ভালো লাগে ; ওঁর অবস্থার কেউ হলে ব্ৰাহ্ম-মেয়েদের গাল দিয়ে নাটক লিখত- ওঁর মন এখনো খোলসা আছে, তোমাকে ভালোবাসেন আর বাবাকে ভক্তি করেন এই তার প্রমাণ | বিনয়বাবুকে ওঁর নিজের ভাবে খাড়া করিয়ে দিতে হবেই দিদি । উনি যে কেবলই গৌরমোহনবাবুকে প্রচার করতে থাকেন সে আমার অসহ্য বোধ হয় ।” এমন সময় “দিদি দিদি” করিয়া সতীশ ঘরে আসিয়া প্ৰবেশ করিল। বিনয় তাহাকে আজ গড়ের মাঠে সার্কাস দেখাইতে লইয়া গিয়াছিল। যদিও অনেক রাত্রি হইয়াছিল। তবু তাহার এই প্রথম সার্কাস দেখার উৎসাহ সে সংবরণ করিতে পারিতেছিল না। সার্কসের বর্ণনা করিয়া সে কহিল, “বিনয়বাবুকে আজ আমার বিছানায় ধরে আনছিলুম। তিনি বাড়িতে ঢুকেছিলেন, তার পরে আবার চলে গেলেন । বললেন কাল আসবেন । দিদি, আমি তাকে বলেছি তোমাদের একদিন সার্কাস দেখাতে নিয়ে যেতে ||” সতীশ কহিল, “তিনি বললেন, মেয়েরা বাঘ দেখলে ভয় করবে। আমার কিন্তু কিছু ভয় হয় নি।” বলিয়া সতীশ পৌরুষ-অভিমানে বুক ফুলাইয়া বসিল । ললিত কহিল, “তা বৈকি ! তোমার বন্ধু বিনয়বাবুর সাহস যে কত বড়ো তা বেশ বুঝতে পারছি। না ভাই দিদি, আমাদের সঙ্গে ওঁকে সার্কাস দেখাতে নিয়ে যেতেই হবে ।” সতীশ কহিল, “কাল যে দিনের বেলায় সার্কাস হবে ।” ললিতা কহিল, “সেই তো ভালো | দিনের বেলাতেই যাব ।” পরদিন বিনয় আসিতেই ললিতা বলিয়া উঠিল, “এই-যে ঠিক সময়েই বিনয়বাবু এসেছেন। লুন ।” বিনয় । কোথায় যেতে হবে ? : ললিতা । সার্কাসে । সার্কাসে ! দিনের বেলায় এক-তবু লোকের সামনে মেয়েদের লইয়া সার্কাসে যাওয়া ! বিনয় তো হতবুদ্ধি হইয়া গেল। ললিত কহিল, “গীেরমোহনবাবু বুঝি রাগ করবেন ?” ললিতার এই প্রশ্নে বিনয় একটু চকিত হইয়া উঠিল। ললিতা আবার কহিল, “সার্কাসে মেয়েদের নিয়ে যাওয়া সম্বন্ধে গৌরমোহনবাবুর একটা মত বিনয় কহিল, “নিশ্চয় আছে।” ললিতা । সেটা কী রকম আপনি ব্যাখ্যা করে বলুন। আমি দিদিকে ডেকে নিয়ে আসি, তিনিও শুনবেন । বিনয় খােচা খাইয়া হাসিল। ললিতা কহিল, “হাসছেন কেন বিনয়বাবু। আপনি কাল সতীশকে।