পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8(ዽX© পাইয়াছিলেন । আহারের সময় গোরার মুখ দেখিয়াও তিনি বুঝিয়াছিলেন, একটা ঝড় হইয়া গেছে। বিনয় আসিয়াই কহিল, “মা, আমি অন্যায় করেছি। শশিমুখীর সঙ্গে বিবাহের কথা নিয়ে আমি আজ সকালে গোরাকে যা বলেছি তার কোনো মানে নেই।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তা হােক বিনয়- মনের মধ্যে কোনো একটা ব্যথা চাপতে গেলে ঐরকম করেই বেরিয়ে পড়ে। ও ভালোই হয়েছে। এ ঝগড়ার কথা দুদিন পরে তুমিও ভুলবে, গোরাও ভুলে যাবে ।” বিনয় । কিন্তু, মা, শশিমুখীর সঙ্গে আমার বিবাহে কোনো আপত্তি নেই, সেই কথা আমি তোমাকে জানাতে এসেছি। আনন্দময়ী | বাছা, তাড়াতাড়ি ঝগড়া মেটাবার চেষ্টা করতে গিয়ে আবার একটা ঝঞ্ঝাটে পোড়ো না। বিবাহটা চিরকালের জিনিস, ঝগড়া দুদিনের । বিনয় কোনােমতেই শুনিল না। সে এ প্রস্তাব লইয়া এখনই গোরার কাছে যাইতে পারিল না। খুড়ামহাশয়ের যাহাতে কোনাে অমত না হয় সে ভার বিনয় নিজেই লইবে । মহিম কহিলেন, “পানপত্রটা হয়ে যাক-না ।” বিনয় কহিল, “তা বেশ, সেটা গোরার সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন ।” মহিম ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “আবার গোরার সঙ্গে পরামর্শ !” বিনয় কহিল, “না, তা না হলে চলবে না ।” ་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་་ ཚ། ཐལའི་ ༩འི་-བི་ཆུ་ RO মহিম সেদিন গোরাকে কিছু না বলিয়া তাহার পরের দিন তাহার ঘরে গেলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন গোরাকে পুনর্বার রাজি করাইতে বিস্তর লড়ালড়ি করিতে হইবে । কিন্তু তিনি যেই আসিয়া বলিলেন যে বিনয় কাল বিকালে আসিয়া বিবাহ সম্বন্ধে পাকা কথা দিয়া গেছে ও পানপত্র সম্বন্ধে গোরার পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিতে বলিয়াছে, গোরা তখনই নিজের সম্মতি প্রকাশ করিয়া বলিল, " বেশ তো, পানপত্র হয়ে যাক-না ।” মহিম আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “এখন তো বলছ বেশ তো' । এর পরে আবার বাগড়া দেবে না। QSb ?ʼ গোরা কহিল, “আমি তো বাধা দিয়ে বাগড়া দিই নি, অনুরোধ করেই বাগড়া দিয়েছি।” মহিম । অতএব তোমার কাছে আমার মিনতি এই যে, তুমি বাধাও দিয়ে না, অনুরোধও কোরো না। কুরুপক্ষে নারায়ণী সেনাতেও আমার কােজ নেই, আর পাণ্ডবপক্ষে নারায়ণেও আমার দরকার দেখি নে । আমি একলা যা পারি। সেই ভালো— ভুল করেছিলুম— তোমার সহায়তাও যে এমন বিপরীত তা আমি পূর্বে জানতুম না। যা হােক, কাজটা হয় এটাতে তােমার ইচ্ছা আছে তো ? গোৱা । হা, ইচ্ছা আছে | মহিম । তা হলে ইচ্ছাই থাক, কিন্তু চেষ্টায় কােজ নেই। গোরা রাগ করে বটে এবং রাগের মুখে সবই করিতে পারে সেটাও সত্য— কিন্তু সেই রাগকে পোষণ করিয়া নিজের সংকল্প নষ্ট করা তাহার স্বভাব নয়। বিনয়কে যেমন করিয়া হউক সে বঁাধিতে চায়, এখন অভিমানের সময় নহে। গতকল্যকার ঝগড়ার প্রতিক্রিয়ার দ্বারাতেই যে বিবাহের কথাটা পাকা হইল, বিনয়ের বিদ্রোহই যে বিনয়ের বন্ধনকে দৃঢ় করিল, সে কথা মনে করিয়া গোরা কালিকার ঘটনায় মনে মনে খুশি হইল। বিনয়ের সঙ্গে তাহাদের চিরন্তন স্বাভাবিক সম্বন্ধ স্থাপন করিতে গােরা