পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (2のふ প্ত মনে করলে আমার আশ্চর্য বােধ হয়। আমার বােধ হয় টােলের ছেলেরা তােমাকে তাদের খুব ট্রা এতটুকু মা বলেই জানত। দাদামশায়কে বােধ হয় তুমিই মানুষ করবার ভার নিয়েছিলে ।” একদিন সন্ধ্যাবেলায় মাদুরের উপরে প্রসারিত আনন্দময়ীর দুই পায়ের তলায় মাথা রাখিয়া বিনয় লি, “মা, ইচ্ছা করে আমার সমস্ত বিদ্যাবুদ্ধি বিধাতাকে ফিরিয়ে দিয়ে শিশু হয়ে তোমার ঐ কোলে শ্ৰেয় গ্রহণ করি— কেবল তুমি, সংসারে তুমি ছাড়া আমার আর কিছুই না থাকে।” বিনয়ের কণ্ঠে হৃদয়ভারাক্রান্ত একটা ক্লান্তি এমন করিয়া প্রকাশ পাইল যে, আনন্দময়ী ব্যথার সঙ্গে ধৰ্ম্ময় অনুভব করিলেন। তিনি বিনয়ের কাছে সরিয়া বসিয়া আস্তে আস্তে তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দতে লাগিলেন। অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিনু, পরেশবাবুদের ড়ির সব খবর ভালো ?” এই প্রশ্ন হঠাৎ বিনয় লজ্জিত হইয়া চমকিয়া উঠিল। ভাবিল, মা'র কাছে কিছুই লুকানাে চলে না, nা আমার অন্তর্যমী |” কুষ্ঠিতম্বরে কহিল, “হা, তীরা তো সকলেই ভালো আছেন।” আনন্দময়ী কহিলেন, “আমার বড়ো ইচ্ছা করে পরেশবাবুর মেয়েদের সঙ্গে আমার চেনা-পরিচয় হয়। প্রথমে তো তাদের উপর গোরার মনের ভাব ভালো ছিল না, কিন্তু ইদানীং তাকে সুদ্ধ যখন তারা শি করতে পেরেছেন তখন তারা সামান্য লোক হবেন না ।” বিনয় উৎসাহিত হইয়া কহিল, “আমারও অনেকবার ইচ্ছা হয়েছে পরেশবাবুর মেয়েদের সঙ্গে যদি কানােমতে তোমার আলাপ করিয়ে দিতে পারি। পাছে গোরা কিছু মনে করে বলে আমি কোনো কথা 闭标门 এইরূপ প্রশ্নোত্তরে পরিচয় চলিতে চলিতে যখন ললিতার প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়িল তখন বিনয় সেটাকে কানোমতে সংক্ষেপে সারিয়া দিবার চেষ্টা করিল। আনন্দময়ী বাধা মানিলেন না । তিনি মনে মনে সিয়া কহিলেন, “শুনেছি। ললিতার খুব বুদ্ধি।” বিনয় কহিল, “তুমি কার কাছে শুনলে ?” পূর্বে এমন এক সময় ছিল যখন ললিতার সম্বন্ধে বিনয়ের মনে কোনোপ্রকার সংকোচ ছিল না । সই মোহমুক্ত অবস্থায় সে যে আনন্দময়ীর কাছে ললিতার তীক্ষ বুদ্ধি লইয়া অবাধে আলোচনা রিয়াছিল। সে কথা তাহার মনেই ছিল না। আনন্দময়ী সুনিপুণ মাঝির মতো সমস্ত বাধা বাচাইয়া ললিতার কথা এমন করিয়া চালনা করিয়া হিয়া গেলেন যে বিনয়ের সঙ্গে তাহার পরিচয়ের ইতিহাসের প্রধান অংশগুলি প্রায় সমস্তই প্রকাশ ইল। গােরার কারাদণ্ডের ব্যাপারে ব্যথিত হইয়া ললিতা যে স্টীমারে একাকিনী বিনয়ের সঙ্গে লােহঁয়া আসিয়াছে, সে কথাও বিনয় আজ বলিয়া ফেলিল। বলিতে বলিতে তাহার উৎসাহ বাড়িয়া ঠিল— যে অবসাদে সন্ধাবেলায় তাহাকে চাপিয়া ধরিয়াছিল তাহা কোথায় কাটিয়া গেল। সে যে লিতার মতো এমন একটি আশ্চর্য চরিত্রকে জানিয়াছে এবং এমন করিয়া তাহার কথা কহিতে রিতেছে। ইহাই তাহার কাছে একটা পরম লাভ বলিয়া মনে হইতে লাগিল। রাত্রে যখন আহারের fবাদ আসিল এবং কথা ভাঙিয়া গেল তখন হঠাৎ যেন স্বপ্ন হইতে জাগিয়া বিনয় বুঝিতে পারিল ইর মনে যাহা-কিছু কথা ছিল আনন্দময়ীর কাছে তাহা সমস্তই বলা হইয়া গেছে। আনন্দময়ী এমন রিয়া সমস্ত শুনিলেন, এমন করিয়া সমস্ত গ্রহণ করিলেন যে, ইহার মধ্যে যে কিছু লজ্জা করিবার ই তাঁহা বিনয়ের মনেই হইল না। আজ পর্যন্ত মা'র কাছে লুকাইবার কথা বিনয়ের কিছুই ছিল না— fড় তুচ্ছ কথাটিও সে তাহার কাছে আসিয়া বলিত। কিন্তু পরেশবাবুর পরিবারের সঙ্গে আলাপ হইয়া বিধি কোথায় একটা বাধা পড়িয়াছিল। সেই বাধা বিনয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হয় নাই। আজ ললিতার ন্ধৈ তাহার মনের কথা সূক্ষ্মদৰ্শিনী আনন্দময়ীর কাছে একরকম করিয়া সমস্ত প্রকাশ হইয়া গেছে ই অনুভব করিয়া বিনয় উল্লসিত হইয়া উঠিল। মাতার কাছে তাহার জীবনের এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ